Theatre Day: কমেছে নাটকের নাটকীয়তা, ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছে গিরিশ ঘোষ, শিশির ভাদুড়িরা…

Outlinebangla: পারফর্মিং আর্টের অংশ থিয়েটার। যা মঞ্চে অভিনেতার পারফরম্যান্স, দৃশ্যাবলী, সংগীত, শব্দ গুলিকে একত্রিত করে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করে। থিয়েটার এমন একটি কলা যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষকে জুড়ে রাখার অন্যতম শক্তিশালী শিল্পমাধ্যম হিসেবে কাজ করে এসেছে। চলচ্চিত্র শিল্পের আবির্ভাবের আগে মানুষ মূলত নাটককেই বিনোদনের উৎস হিসেবে উপভোগ করত। তবে দিন বদলেছে, বদলেছে মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গি, তবে আজও নাটকের স্বীকৃতি বজায় রাখতে প্রতিবছর ২৭ মার্চ বিশ্ব জুড়ে উদযাপিত হয় “বিশ্ব থিয়েটার দিবস” (World Theatre Day)। “বিশ্ব থিয়েটার দিবস” (World Theatre Day) নাটক সংরক্ষণ, ঐক্য স্থাপন, সম্প্রীতি, উদ্দীপনা সৃষ্টি এই সব কিছুই সকল স্তরের মানুষের কাছে প্রচারের জন্য উদযাপিত হয়।

সাল ১৯৬১, হেলসিঙ্কি ও পরে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত হয় ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের নবম কংগ্রেসের অধিবেশন। ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় আইটিআই আন্তর্জাতিক আইটিআই-কে অনুরোধ জানায় সারা বিশ্বের নাট্যকর্মীদের সৌভ্রাতৃত্ব আর ভাবনা আদানপ্রদানের লক্ষ্যে একটা দিন নির্দিষ্ট করার জন্য। এই প্রস্তাবটিকে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো সমর্থন করেন। এবং ঠিক পরের বছর অর্থাৎ ১৯৬২ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত থিয়েটার অব নেশন্স উৎসবের সূচনার দিনই প্রতি বছর বিশ্ব নাট্য দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিশিষ্ট ফরাসি নাট্যকার জ্যঁ ককতো বিশ্ব থিয়েটার দিবসের (Theatre Day) প্রথম বক্তব্য প্রেরণ করেছিলেন।

world Theatre Day
World Theatre Day: (ছবিঃ সংগৃহীত)

জানা যায়, খ্রিষ্টীয় প্রথম থেকে খ্রিস্ট পূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর মধ্যে সংস্কৃত নাটকের বিকাশ ঘটেছিল। ওই সময় মূলত নাট্যচর্চা করত রাজন্যবর্গ ও ব্রাহ্মণরা। এমনকি নাটক নিয়ন্ত্রিত বা নির্ধারিত হত তাঁদের দ্বারাই। তখন কার দিনে সাধারণ মানুষের কোনো ভূমিকা ছিল না নাটকের মধ্যে। তবে ভারতের বাইরে গিয়ে দেখলে বুঝতে পারবেন প্রাচীন গ্রীসে নাট্যচর্চায় সাধারণ মানুষের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাচীন ভারতীয় নাট্যকারদের উদ্দেশ্য ছিল, রাজন্য পরিবার থেকে শুরু করে রসজ্ঞ জ্ঞানি ব্যাক্তিদের তৃপ্তি সাধন করা। তবে এই নাটকের ধারা অবহ্যত ছিল মুসলমান সম্প্রদায়ের অধিপত্য লাভের আগে পর্যন্ত।

ওই সময় নাট্যভিনয় ইসলাম বিরোধী হওয়ায় মুসলিম শাসকেরা শিল্প সাহিত্যে উন্নতি ঘটালেও নাটকের উন্নতিতে সেভাবে নজর দেয়নি কখনোই। তবে সাধারণ মানুষ নাট্যরসের আকাঙ্ক্ষা নিয়েই শুরু করেছিল যাত্রা, কথকথা, সং সাজা যা জনসাধারণের কাছে বিনোদনের এক আকর্ষণীয় বিষয় হয়ে দাড়িয়ে ছিল। তারপরই শুরু হল অষ্টাদশ শতাব্দী অর্থাৎ নবজাগরণের যুগ। ঘটল ইংরেজ রাজত্বের সূচনা। তখন থেকে শিক্ষা, বিজ্ঞান, চিন্তা চেতনা ও সংস্কৃতির সংস্পর্শে বাঙালি যেন সোনার কাঠির আলোয় আলোকিত হল। তখন থেকেই বাংলা নাটকের রস ধারার প্লাবন ছুটল।
আরও পড়ুনঃ Chaitanya Mahaprabhu: হিন্দু সংস্কৃতির অবক্ষয় রুখতে ভাব-বিপ্লবের প্রসার ঘটিয়েছিল চৈতন্যদেব

থিয়েটার বা নাটকে আধুনিকতার ছোঁয়া নিয়ে এসেছিলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ। তাঁর হাত ধরেই এসেছেন প্রতিভাবান নাট্যচিন্তকেরা। এমনকি ওই সময় বাঙালিজাতি পেয়েছে শিশির ভাদুড়ির মতো নাট্যব্যক্তিত্বকে। স্বদেশী আন্দোলনের সময় ঐতিহাসিক নাটক লেখার জন্য কলম ধরেছিলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ। তাঁর লেখা নাটক ‘সিরাজদ্দৌলা’ ও মীরকাশেম অপেক্ষা ছত্রপতি শিবাজী’র মধ্যে পরিণত ইতিহাস চিন্তাধারার ছাপ পাওয়া যায়। কারণটা হল গিরীশ চন্দ্রের মূল আদর্শের বিষয় শিবাজী। তাঁর নাটকের মধ্যে হিন্দু ও মুসলমানের সৌভ্রাতৃত্বের কথা থাকলেও, নাটকের দৃশ্য ওই যুগের ধারা অনুযায়ী চিত্রিত হয়ে এসেছে।

Theatre Day
Theatre Day: (ছবিঃ সংগৃহীত)

আজকের দিনে থিয়েটার বা নাটক প্রসঙ্গে সকলের যেটা জানা জরুরী সেটা হল বর্তমানে নাটকের মধ্যে সবচেয়ে কম নাটকীয়তা থাকে। অনেকের জানা নেই নাটক বা থিয়েটারে প্রাসঙ্গিকতাও থাকে। থিয়েটার এমন একটি মাধ্যম, যেখানে মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা সবচেয়ে বেশি, কিন্তু ব্যক্তিগত অবদান অনেকটা কম। কারণটা হল সিনেমা বা সিরিয়ালের ফরম্যাট বদলালেও নাটকে এখনও রয়ে গিয়েছে পুরনো ফরম্যাটে।
আরও পড়ুনঃ Schizophrenia: ভূত এবং ভগবানের আসল রহস্য

আমরা অনেকেই দেখি কম বয়সী ছেলে মেয়ে দল বেঁধে নাটকের ক্লাস করে এবং রঙ্গ মঞ্চে নিজের ছাপ রাখে, কিন্তু তাদের বেশিরভাগই শেষ পর্যন্ত নাটক নিয়ে জীবন কাটায় না। কারণটা হল আজকের দিনে নাটক হয়ে গিয়েছে শিক্ষাচর্চা। আজকের দিনে ট্রেন্ডিং অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্যের নাট্যাভিনয় নাটকের মোহময়তা পাল্টে দিয়েছেন। তবে বলতেই হয় সিরিয়াল, ওয়েব সিরিজের থেকে নাটকের গুনগত মান অনেক ভালো।

শুরু থেকেই মানুষের নিজের গল্প বলার তাগিদটা অদম্য। যে কারনে থিয়েটারের মত সৃজনশীল মাধ্যমের অন্ত নেই। তাই আমাদের নিজের প্রয়োজনেই বাঁচিয়ে রাখতে হবে নাট্যচর্চাকে। নাহলে সামাজিক গোলকধাঁধায় হারিয়ে যাবে বাংলা থিয়েটার। আমাদের শিল্পের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে, উৎসাহ দিতে হবে এবং থিয়েটার দেখতে হবে, এভাবেই নাটকের ধারাকে অব্যাহত রাখতে পারবো আমরা।
আরও পড়ুনঃ Mahanayak uttam kumar: অভিনয়ের দ্বারা দর্শক ধরে রাখার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তাঁর, তিনি মহানায়ক

সম্পর্কিত পোস্টগুলি

আমাদের ফলো করুন

3,919FansLike
42SubscribersSubscribe

না পড়লেই মিস