Outlinebangla: সংগীত উপযোগী শব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্রকেই এককথায় বাদ্যযন্ত্র বলা হয়। কণ্ঠ সংগীত ও যন্ত্রসংগীতে সাধারণত এগুলি ব্যবহার করা হয়। একদিকে মানুষের জীবনযাত্রা ও কর্মসূত্রে সংগীতের প্রভাব ছিল অপূরণীয়। অপরদিকে মানুষের জীবনযুদ্ধের সঙ্গেও যন্ত্রসংগীত অঙ্গাগিক ভাবে জড়িত। মানুষ আত্মরক্ষার জন্য হাতিয়ার, খিদে মেটাতে শিকারের জন্য অস্ত্র তৈরী করেছিলো। এগুলিই মানুষের তৈরী প্রথম অস্ত্র বা হাতিয়ার। পরে এদের হাত ধরেই বিভিন্ন রকমের যন্ত্র তৈরী হয়েছিল (Evolution of Musical Instruments)। মানুষের তৈরী যন্ত্র গুলির মধ্যে বাদ্যযন্ত্রগুলি এক অন্যরকম জায়গা দখল করে রেখেছে। ঘন বাদ্য তৈরী করা হতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথর থেকে। এছাড়াও ধনুক থেকে ধনু, বান থেকে বীনা, বাঁশ থেকে বাঁশি, পশুর চামড়া বা ছাল থেকে অনবদ্ধ বাদ্য তৈরী করা হতো (Evolution of Musical Instruments)। উপরে উল্লিখিত বাদ্যযন্ত্রগুলি থেকে বিভিন্নরকম শব্দ উৎপাদনের দ্বারা খুব কম সময়ের মধ্যেই মানুষের মনে আনন্দের সঞ্চার ঘটিয়েছিল। ফলে সুরের সম্পর্ক গড়ে ওঠেছিলো মানুষের জীবনযাপনের সঙ্গে (Evolution of Musical Instruments)।
Evolution of Musical Instruments:
পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো ও পরিচিত বাদ্যযন্ত্র গুলোর উৎপত্তি হয়েছিল অনেক আগেই সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগে (Evolution of Musical Instruments)। বিশ্বের বিভিন্ন পত্নতাত্বিক জায়গা গুলোতে খুঁজে পাওয়া যায় এই যন্ত্রগুলোকে। বাদ্যযন্ত্রগুলি আগেকার যুগের সংগীত ও সংস্কৃতির ধারণা দেওয়ার পাশাপাশি প্রাচীন যুগের সংগীত চর্চার বিকাশের পর্যায়গুলো মনে করিয়ে দেয়। ঐতিহাসিকদের মতামত অনুযায়ী, হাজার হাজার বছর আগেও সংগীত মানুষের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। চিন, গ্রীস, মিশরের মতো দেশগুলোতে সংগীত ধর্মের সাথে অঙ্গাগি ভাবে যুক্ত ছিল। ফলে প্রায়শই আচার অনুষ্ঠানে বাদ্যযন্ত্র গুলিকে ব্যবহার করা হতো (Evolution of Musical Instruments)।
musical instruments
প্রাগৈতিহাসিক যুগের বাদ্যযন্ত্র গুলো মানুষ সাধারণত পশুর ছাল, হাড় ইত্যাদি দিয়ে নিজের হাতে তৈরী করতো বলে ধারণা করা হয়। ১৯৯৫ সালে স্লোভেনিয়ার গুহায় আবিষ্কৃত হয়েছিল দিভজে বাবে বাঁশি (Divje Babe Flute)। শোনা যায় ভালুকের হাড়ের একটি অংশ ফিমার দিয়ে তৈরী এই বাঁশিটি ৬০-৮০ হাজার বছরেরও পুরোনো। উল্লিখিত বাঁশিটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো বাদ্যযন্ত্র হিসাবে ধরা হয়। নিয়ান্ডারথাল মানবরা এই বাঁশিটির জন্মদাতা বলে মনে করা হয়। সমান দূরত্বতে চারটি গর্ত যুক্ত বাঁশিটি খুব মসৃন প্রকৃতির ছিল। ঐতিহাসিকরা প্রাচীন বাদ্যযন্ত্রের খোঁজে এখনো পর্যন্ত যতগুলো প্রত্নতাত্বিক স্থানে ঘুরেছেন তার মধ্যে অন্যতম স্থান হলো গাইসিনক্লসটাল গুহা। এখান থেকে তিন তিনটে বাঁশির উদ্ধার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে একটি ম্যামথের দাঁত দিয়ে এবং অপরদুটি রাজহাসের হাড় দিয়ে তৈরী। ঐতিহাসিকদের মতামত অনুযায়ী এগুলি আরিগনাসিয়ের সঙ্গে যুক্ত, যেটি ইউরোপের প্রাচীন জনগোষ্ঠীর সাথে জড়িত একটি প্রত্নত্বতিক সংস্কৃতি। জানা যায় বাঁশিগুলো ৪২,০০০ থেকে ৪৩,০০০ বছরেরও বেশি পুরোনো।
আরও পড়ুনঃ Eco friendly vehicle: ইতিহাসের পাতায় বিশ্বের প্রথম পরিবেশ বান্ধব যান
instruments evolution
২০০৮ সালে দক্ষিণ জার্মানির বাভারিয়ায় হোহেল ফেলস গুহা থেকে একটি বাঁশি আবিষ্কার করা হয়। গুহার নাম অনুসারে বাঁশিটির নাম ও রাখা হয় হোহেল ফেলস বাঁশি। শুকুনের ডানার হাড় থেকে তৈরী এই বাঁশিটি প্রায় ৩৫০০০ বছরের পুরোনো। এটি আচার এবং বিনোদন উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হত। চিনদেশে সাতটি তারের জিথার গুকিন নামক একটি নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র ছিল। অনুমান করা হয় এটি ৩০০০ বছরের বেশি সময়ে ধরে ব্যবহার করা হয়েছে। এই বাদ্যযন্ত্রটি বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক উদেশ্যই বাজানোর প্রচলন ছিল। প্রত্নতাত্বিক হাওয়ার্ড তুতেনখামুনের যখন সমাধি খনন করছিলেন তখন দুটি বহু পুরোনো ট্রাম্পেট পাওয়া গিয়েছিলো। এই ট্রাম্পেট গুলো ৩০০০ এর ও বেশি পুরোনো বলে ধরা হয়। প্রাচীন গ্রিস ও মেসোপটেমিয়ায় একটি তারযুক্ত যন্ত্র, যেটার একটি সাউন্ডবক্স ও একটি জোয়াল রয়েছে যা তারগুলোকে ধরে রাখে। এটি ৪৫০০বছরের বেশি পুরোনো বলে মনে করা হয়।
প্রায় ১০০০ বছরেরও বেশি পুরোনো দুটি বাদ্যযন্ত্র কালিম্বা এবং এম্বিরা প্রথম আফ্রিকাতে পাওয়া গিয়েছিল। কলিম্বাতে একটি কাঠের বোর্ড থাকে, যার মধ্যে বাঁশের বা অন্য যে কোনো ধাতুর ছবি লাগাতে হয় অপরদিকে এম্বিরা হলো কাঠের বোর্ডের সঙ্গে সংযুক্ত ধাতব চাবি দিয়ে তৈরী। কলিম্বা একটি থাম্ব পিয়ানো এবং এম্বিরা একটি প্লাকড ইডিও ফোন। পথিবীর বিভিন্ন স্থানে সবচেয়ে বেশি পাওয়া একটি বাদ্যযন্ত্র হল ঢোল। বাদ্যযন্ত্রটি একটি কাঠের ফ্রেমের উপরে পশুর ছাল দ্বারা গঠিত। এটি ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক উভয় ক্ষেত্র উদযাপনেই ব্যবহৃত হতো। ঢোল প্রায় ৫০০০ বছরের ও বেশি পুরোনো বলে ধারণা করা হয়। এটি প্রথম আফ্রিকায় আবিষ্কৃত হয়। বর্তমানে ব্যবহৃত বীনা এখনকার মতো প্রাচীন যুগেও জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্র ছিল। শোনা যায় এটি চার হাজার বছরের বেশি পুরোনো।
আরও পড়ুনঃ Food History & Culture: আহারের কতই না বাহার! জানুন বাঙালীর খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস..
প্রাচীন সিন্ধু উপত্যকা খননের সময়ে ৩.৫-৪ ফুট লম্বা কাঠের তৈরী বীনার প্রথম খোঁজ পাওয়া যায়। প্রাচীনকালের বাদ্যযন্ত্র গুলোর খোঁজ পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলো তখনকার সভ্যতা, সংস্কৃতি, সংগীতের বিকাশ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেয় আমাদের (Evolution of Musical Instruments)। এগুলোর আবিষ্কারের ফলে তৎকালীন ইতিহাস ও সংস্কৃতি সমন্ধে সঠিক ধারণা ও মূল্যবান তথ্য জানানোর পাশাপাশি অতীতের নিদর্শন গুলির সংরক্ষণ ও অধ্যয়নের গুরুত্বও তুলে ধরতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুনঃ Shankha-Pola: বাঙালি বিবাহ সংস্কৃতিতে শাঁখা-পলার প্রচলন কীভাবে শুরু হয়েছিল? তা কি জানেন?