Outlinebangla: আধুনিকরনের প্রভাব গিয়ে পড়ছে নগরায়নের উপর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পরিবেশের অবনতির পরিমান। যার জেরে আমাদের মধ্য থেকে ক্রমেই কমে যাচ্ছে ছোট্ট বন্ধুদের উপস্থিতি। আমরা প্রত্যেকেই ছোটোবেলার স্মৃতিতে হাঁটলে মনে পরবে রজনীকান্ত সেনের কবিতা ‘স্বাধীনতার সুখ।’ যে কবিতাটিতে চড়ুই পাখির (Sparrow) অট্টালিকায় থাকার সুখ সঙ্গে বাবুই পাখির নিজ বাসায় থাকার স্বাধীনতার কথা কথা বলা হয়েছে। আজ ছোট্ট বন্ধু চড়ুই (Sparrow) পাখিদের নিয়ে কিছু কথা বলব। আমরা হয়তো জানিনা যে সারা পৃথিবী জুড়ে নানা কর্মযজ্ঞ চলছে চড়ুই পাখির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর ২০ মার্চ বিশ্ব চড়ুই দিবস (World Sparrow Day) পালন করা হয়।
বর্তমানে চিত্রটা বদলে গিয়েছে, আগেকার দিনের মত আজ আর নেই চড়ুইয়ের অট্টালিকার অহঙ্কার। কারণটা মানুষের সর্বগ্ৰাসী লোভ। মানুষ কখনও ভাবেনি চড়ুইয়ের (Sparrow) মত অতি সাধারণ একটা ছোট্ট পাখি এত দ্রুত বিপন্ন হয়ে পড়বে। এই ছোট্ট পাখিকে টিকিয়ে রাখার জন্য সচেতন করতে হবে মানুষকে। বাড়ির বারান্দা থেকে বাড়ির উঠান সর্বত্র দেখা মিলত চড়াই পাখির। কিন্তু আজ আর দেখা মেলেনা। সারা পৃথিবী জুড়ে নানা রকমের চড়ুই পাখি (Sparrow) রয়েছে। আমরা মূলত যে সব চড়ুই পাখি চিনি সেগুলো গৃহস্থালির চড়ুই ও মাঠ চড়ুই। চড়ুইয়ের প্রজাতিভেদে এদের আকারও হয় ভিন্ন। তবে অনেকেরই অজানা, আমাদের মতই চড়ুইয়ের নানা নাম ও নানা পরিচয় রয়েছে। সারা পৃথিবীতে ২৭ রকমের চড়ুই পাখি দেখা যায়। তবে আমরা চড়ুইকে বাঁচাতে যদি কিছু না ভেবে থাকি, তাহলে সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে পাখিগুলি শুধুমাত্র ছবির বইতে বা কোনো বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে দেখতে হবে।
আরও পড়ুনঃ Most Beautiful Birds: রূপে গুনে সমৃদ্ধ বিশ্বের সেরা পাঁচ পাখির কথা…

চড়ুই পাখি হারিয়ে যাওয়ার পিছনে যে সব কারন দায়ীঃ
উপযোগী পরিবেশের অভাবঃ ছোটো প্রজাতির পাখিদের বাসা বাঁধার জন্য প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি কোটর অনুপস্থিত। চারিদিক ঘিরেছে কাঁচের তৈরি কর্পোরেট ভবন। যেখানে পাখিদের আশ্রয় তো দুরের কথা দাঁড়াতে পর্যন্ত পারে না। যেখানে পুরনো আমলের ভবনগুলোতে একাধিক কোটর রাখা হত পাখিদের কথা ভেবে।
দেশীয় গাছের অনুপস্থিতিঃ বাড়ির উঠানের সামনে ডুমুর গাছ বা মেহেন্দি গাছটি আর নেই। সেখানে জায়গা পেয়েছে বাড়ির শোভা বাড়ানোর অর্কিড। দেশীয় গাছ চড়ুইয়ের আবাস্থল। যেখান থেকে বীজ বা অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি পোকামাকড় মিলত। কথায় আছে গাছ যত বেশি পাখি তত বেশি। দ্রুত গাছপালা কমে যাচ্ছে। ফলে চড়ুইও তাদের বসবাস উপযোগী পরিবেশ হারাচ্ছে।
আধুনিক শপঃ আগেকার দিনে মুদির দোকানের বাইরে বিভিন্ন রকম শস্যকণা কমবেশি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতো। যা পাখিদের খাবারের একটা উৎস হিসাবে ধরা হতো। কিন্তু সময় বদলেছে, বদলেছে মানুষের জীবনধারণ ফলে বেড়েছে আধুনিক শপের সংখ্যাটাও। আজকের দিনে আধুনিক সুপার শপ গুলোতে শস্যকণা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার সম্ভাবনা নেই। কারন সবই প্লাস্টিকের প্যাকেজিং।
ফোনের রেডিয়েশনঃ জানা যায়, মোবাইল ফোনের টাওয়ার থেকে সৃষ্ট ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ক্ষেত্র এবং রেডিয়েশন চড়ুই কে প্রভাবিত করে। যার জেরে চড়ুই পাখির ইমিউন এবং স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয়। যা বংশগতিতে অনেকটা প্রভাব ফেলে।
রাসায়নিক সার মিশ্রিত কৃষিপণ্যঃ বর্তমানে কৃষিজমিতে ভালো ফসল ফলানোর জন্য নানান ধরনের রাসায়নিক সারের ব্যবহার করছেন কৃষকরা। যার ফলে খাদ্য শস্যের গুনগত মান পরিবর্তন হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে চড়ুই পাখির দল।

পরিবেশবান্ধব ও কৃষকবান্ধব পাখি
চড়ুই খুবই পরিবেশবান্ধব ও কৃষকবান্ধব পাখি। এদেরকে টিকিয়ে রাখতে দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগানোর কাজে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সেই সব গাছ লাগান যেগুলো পাখিরা বাসা তৈরি এবং খাদ্যের উৎস হিসেবে কাজ করবে। সরকার বা সংস্থার পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে সুরেলা কন্ঠের চঞ্চল এই পাখিটিকে রক্ষা করার বিষয়টিকে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ Tiny Animals: যেসব ক্ষুদ্র প্রাণীকে একদম এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়