Outlinebangla: বজ্রপাতের সময় আকাশে থাকা Aircraft এর কি কোনো ক্ষতি হয়? (Aircraft and lightning strikes) আমাদের বিশ্বে পার সেকেন্ডে প্রায় ১.৪ বিলিয়ন বার ধরে গড়ে ৪৪ টি করে বজ্রপাত হয়। যার ফলস্বরূপ প্রত্যেকটি বছর পৃথিবী থেকে বহু মানুষ বিদায় নিচ্ছে। বজ্রপাত বেশি দেখা যায় ক্রান্তীয় অঞ্চলে অথবা গ্রীস্মমন্ডলীয় অঞ্চলে। প্রতি বছর আমাদের দেশের প্রায় ১৫০ জন মানুষের প্রাণ যায় বজ্রপাতের কারণে এমনটাই জানা গেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের প্রাপ্ত তথ্য থেকে।
বজ্রপাতের মধ্যে বিমানগুলি কি নিরাপদ?
এইসময় যে কোনো খোলা জায়গা খোলা মাঠে থাকা অত্যন্ত বিপদজনক। এই কথাটি সমানভাবে আকাশের ক্ষেত্রেও মানতে হয়। এইধরণের দুর্যোগে পরিপূর্ণ আবহাওয়াগুলি উড়োজাহাজের ওঠা নামার পথে বাঁধার সৃষ্টি করে তাই ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে। এখন অনেকের মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুর পাক করছে যে উড়োজাহাজের উপর কি বজ্রপাত হয়? যদি উত্তরটি হ্যাঁ হয়, সেক্ষেত্রে কি কি ক্ষতি হয়?
আরও পড়ুনঃ The Statue of Liberty: যুক্তরাষ্ট্রের কালো অধ্যায়কে পেছনে ফেলে যেভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে স্ট্যাচু অব লিবার্টি
আকাশের উপরে থাকা উড়োজাহাজে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা কতটাঃ
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরোনটিকস এন্ড অস্ট্রোনিকসের অধ্যাপক জন হান্সম্যান উপরের প্রশ্নটির উত্তর দিতে গিয়ে জানিয়েছেন,’ হ্যাঁ উড়োজাহাজ আকাশের উপরে থাকা অবস্থাতেও বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অনেকটাই। যেকারণে এখনকার বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ গুলি তৈরী করার সময় বজ্রপাত প্রতিরোধী করেই তৈরী করা হয়।’ এর থেকে নিশ্চিত বোঝা যাচ্ছে আকাশে যদি বজ্রপাতের মুখে যাত্রীরা পড়েও যায় তাও তারা নিরাপদই থাকবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বজ্রপাতের পরে আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত উড়োজাহাজটিকে রক্ষনাবেক্ষন করলে ক্ষতির নিশানা পাওয়া যায় না বললেই চলে।
তবে ১৯৬৭ সাল নাগাদ বজ্রপাতের কারণে একটি বাণিজ্যিক জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। যদিও তারপর থেকে এই ধরণের ঘটনা আর ঘটেনি। মানুষের আবিষ্কৃত যন্ত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম জটিল যন্ত্রটির নাম উড়োজাহাজ। পেট্রোলিয়ামের মতো জীবাশ্ম জ্বালানিকে পুড়িয়ে শক্তি তৈরী হয়, যা উড়োজাহাজের ইঞ্জিনকে সচল রাখতে সাহায্য করে। উড়োজাহাজের ভিতরে বিভিন্ন ধরণের ছোট খাটো যন্ত্রপাতি চলে যেমন এসি, ৱ্যাডার, বৈদ্যতিক বাতি সহ আরও কিছু। এগুলো সব জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ তৈরী করে চালানো হয়।
আরও পড়ুনঃ Everything about Schizophrenia in bengali: ভূত এবং ভগবানের আসল রহস্য
প্রযুক্তির অগ্রগতিঃ
উড়োজাহাজের ভিতরকার জ্বালানি ট্যাংক বা বৈদুতিক যন্ত্রাংশের উপর কোনোভাবেই বজ্রপাতের ছোঁয়া পর্যন্ত লাগানো যাবে না, লাগলেই ঘোর বিপদ। দুর্ঘটনা রুখতে বজ্রপাতের পুরো শক্তি উড়োজাহাজের দেহের উপর দিয়েই নিয়ে যেতে হবে যেন তেন প্রকারে, কোনোমতেই ভিতরে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। প্রকৌশলীরা এটিই করে থাকেন।
উড়োজাহাজের মধ্যেকার বিদ্যুৎ পরিবহণের তার গুলি পরিপাটি করে ইনসুলেটর দিয়ে মোড়ানো থাকে। এটির ট্যাংকটিকেও বিদ্যুৎ বিরোধী হিসাবেই তৈরী করা হয়। তবে আসল কেরামতিটি করা থাকে উড়োজাহাজের দেহে। এটির বাইরেকার অংশ তৈরী করতে বিভিন্ন ধাতব পদার্থ দিয়ে যেমন অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, টাইটেনিয়াম ইত্যাদি। যার জন্য উড়োজাহাজের গোটা দেহটি কাজ করছে ফ্যারাডে খাঁচার মতো। অতএব আকাশে থাকা অবস্থাতে বজ্রপাত হলেও ইলেকট্রনের স্রোত পুরো দেহে ছড়িয়ে পুনরায় বায়ুমন্ডলে ফিরে চলে যায়। এটির ফলস্বরূপ ভিতরের সমস্ত কিছু সুরক্ষিত থাকে।
আরও পড়ুনঃ Salt is Essential to Life: লবন ছাড়া কি বাঁচা সম্ভব?
উড়োজাহাজের জন্য বজ্রপাত ছাড়াও কি কি বিষয়ে চিন্তা থেকেই যায়ঃ
জন হ্যান্সমানের মতানুযায়ী, ‘বজ্রপাত মূলত উড়োজাহাজের নাক অথবা পাখাতে আঘাত আনে, তারপর গোটা দেহে ছড়িয়ে গিয়ে লেজের দিক দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায় বাতাসে’। এখনকার উড়োজাহাজগুলি আরও নিরাপদ। বোয়িং ৭৮৭ এবং এয়ারবাসে ৩৫০ এর মতো উড়োজাহাজ গুলি কার্বন ফাইবারের অপরিবাহী যৌগিক মিশ্রনের উপাদানে তৈরী হওয়ায় ফিউজিলেজ (উড়োজাহাজের মূল দেহ) ও ডানার বৈদ্যুতিক পরিবাহীতা কমে যায়। এসমস্ত কিছু থেকে বোঝাই যাচ্ছে বজ্রপাত উড়োজাহাজের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কিন্তু শিলাবৃষ্টি, ঘূর্ণিবায়ুর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ গুলি এটির জন্য বেশ চিন্তার বিষয়।