”গ্রীন ট্রাইবুনালের চিঠি অনুযায়ী মেলা বন্ধ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মাঠ পরিষ্কার করতে হবে, নাহলে কেস হবে, প্রতিবছর ১০ লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে মেলা করতে পারবেন না বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ”
আউটলাইন বাংলাঃ ২০১৯ সালে পৌষমেলা নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বিবাদ শুরু হয়। বিবাদের জেরে ১৭৫ বছরের বেশি পুরোনো ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা হবে কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল । তবে জট কাটিয়ে কোনওরকমে হয়েছিল পৌষমেলা।

১৮৪৩ সালে ২১ ডিসেম্বর (৭ পৌষ) মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের কাছে ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হন। এরপর এই ধর্মের প্রসার ও প্রচার বৃদ্ধি পায়। এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ও প্রচারের স্বার্থে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৪৫ সালে কলকাতার গোরিটির বাগানে উপাসনা, ব্রাহ্ম মন্ত্র পাঠের আয়োজন করেন। এটিকেই পৌষমেলার সূচনা বলে ধরা হয়। পরবর্তীকালে ১৮৬২ সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে আশ্রম প্রতিষ্ঠার কথা ভাবতে শুরু করেন। ১৮৯১ সালে ব্রহ্মমন্দির বা উপাসনা গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটিকে শান্তিনিকেতনের পৌষ উৎসবের সূচনা হিসেবে ধরা হয়। ১৮৯৪ সালে এই পৌষ উৎসবের পাশাপাশি মন্দির সংলগ্ন মাঠে শুরু হয় পৌষ মেলা। দিন দিন মেলার পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে পূর্ব পল্লির মাঠে এই মেলা হয়ে আসছিল।
মেলা তুলে দেওয়া নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিবাদ বেঁধেছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের।

তা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। অন্যদিকে, পৌষমেলার কারণে দূষণ হচ্ছে, এই মর্মে পরিবেশ আদালতে একটি মামলা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এবিষয়ে আজ কর্মসমিতির বৈঠক ডাকা হয়৷ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি মনোনীত বিশ্বভারতীর কর্মসমিতির সদস্য সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী মনোনীত সদস্য দুলালচন্দ্র ঘোষ, বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী সহ অন্যরা। বৈঠক শেষে বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার বলেন, “প্রথা অনুযায়ী পৌষ উৎসব পালিত হবে কিন্তু পৌষমেলা করবে না বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এছাড়া দোলের দিন বসন্ত উৎসব হবে না। কর্মসমিতির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।“

বিশ্বভারতীতে এবছর আর করা হবে না পৌষ মেলা, জানিয়ে দিয়েছে বিশ্বভারতী কতৃপক্ষ।

সাথে সাথেই বসন্ত উৎসব কে নিয়েও অনিহা প্রকাশ করেছে বিশ্বভারতী। দোল এর দিন হচ্ছে না বসন্ত উৎসব, সাথে সাথে সাধারন মানুষের জন্য বসন্ত উৎসব হবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। রাষ্ট্রপতি মনোনীত বিশ্বভারতীর কর্মসমিতির সদস্য সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন “গ্রীন ট্রাইবুনালের চিঠি অনুযায়ী মেলা বন্ধ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মাঠ পরিষ্কার করতে হবে, নাহলে কেস হবে, প্রতিবছর ১০ লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে মেলা করতে পারবেন না বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।“ এছাড়াও আগের বছর মেলা নিয়ে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হয় বিশ্বভারতী।
বসন্ত উৎসব এবং পৌষ মেলা এই দুই এর টানে দেশ বিদেশ থেকে ছুটে আসেন মানুষ। সারা বিশ্বের কাছে শান্তিনিকেতন আজ নিজের জায়গা করে নিয়েছে। বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যবাহী এই অনুষ্ঠান জনসংযোগেরও মাধ্যম, যা বন্ধ হতে চলেছে। এর দায় কি শুধু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের নাকি আমাদেরও?