‘আট বছর বয়স থেকেই কবিতা লেখা শুরু। ষোলো বছর বয়সে ভানুসিংহ ছদ্মনামে শিল্পকর্ম রচনা এবং বিভিন্ন কবিতার প্রকাশ। রবীঠাকুর (Rabindranath Tagore) আজ বিশ্বজোড়া স্বনামধন্য, বিশ্বকবি নামে আখ্যায়িত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরেই ছোটো গল্পের সুত্রপাত। অনেকেই জানেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও বিহারীলালের লেখনীর মাধ্যমে বাংলা কবিতায় আধুনিকতার সূচনা, তবে তা পূর্ণতা পায় রবিঠাকুরের হাত ধরেই।’— লিখেছেন- শ্রাবণী ঘোষ
Outlinebangla: দেশ থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে সাহিত্যের (bengali literature) এক নতুন পরিচয় দেওয়া প্রথম নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আজ ১৬০তম জন্মবার্ষিকী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) ৭ মে ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে, (বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দে) কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শৈশব কালে তিনি স্নেহের সাথে ‘রবি’ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি কেবল কবিই ছিলেন না, ছিলেন সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী ও লেখকও। তবে কবিগুরুর সাথে সম্পর্কিত অনেক আকর্ষণীয় বিষয় আমাদের অজানা।
আট বসয় বয়স থেকেই তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন, তবে তখন সেগুলি প্রকাশিত হয়নি। অনেকেই জানেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও বিহারীলালের লেখনীর মাধ্যমে বাংলা কবিতায় আধুনিকতার সূচনা, তবে তা পূর্ণতা পায় রবিঠাকুরের হাত ধরেই। তাঁর সাহিত্যধারার মধ্যে কখনো দেশভক্তি আবার কখনো প্রতিবাদীর সুর শোনা যায়। তিনি তাঁর অসামান্য শিল্পীভাবনাকে কজে লাগিয়ে দেশের মাটি,সবুজ ধানের ক্ষেত এবং সর্বোপরি সাধারণ মানুষের কর্মভিত্তিক পেশা পর্যায়ের পটচ্ছবি কেও তার লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। এগুলোর পরিচয় পাওয়া য়ায়, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি (গান), বিচিএ সাধ (কবিতা), কবুলিওয়ালা (ছোটো গল্পর) র মাধ্যমে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই (Rabindranath Tagore) প্রথম ব্যক্তি যিনি দুটি দেশের জাতীয় সংগীত রচনা করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই প্রথম ব্যক্তি, যার রচনা করা দুটি জাতীয় সংগীত দুটি দেশে গাওয়া হয়। একটি হ’ল ভারতের “জন গণ মন”এবং অন্যটি বাংলাদেশের “আমার সোনার বাংলা।” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাজারো সংগীত রচনা করেছেন। রবি ঠাকুরের অন্যতম জনপ্রিয় বই ‘কিং অফ দ্য ডার্ক চেম্বার’। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিলাম হয়েছিল সাতশো ডলারে (প্রায় ৪৫ হাজার টাকা)। বইটি ১৯১৬ সালে ম্যাকমিনাল সংস্থা প্রকাশ করেছিল, যা রবি ঠাকুরের হিন্দি নাটক ‘রাজা’ এর ইংরেজি অনুবাদ।
সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার (Nobel Prize in Literature):
১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। তিনিই প্রথম এশীয় ও একমাত্র বাঙালি লেখক যিনি সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী। পরাধীন ভারতবর্ষে নব জাগরণের ঊষালগ্নে তার কবিতা, গান, সাহিত্য, নাটক চরমভাবে আনুপ্রানীত করেছিল মানুষকে। তার সাহিত্য সম্পর্কে এমন দক্ষতা ও লেখনী দেখে রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর, রজনীকান্ত সেন ইত্যাদি ব্যেক্তিবর্গ সাহিত্যচর্চায় (bengali literature) ব্রতী হয়েছিলেন। যার ফলস্বরূপ স্বাধীনতার পথ আরও প্রশস্থ হয়।
আরও পড়ুন-
১। Remembering Saratchandra: শরৎচন্দ্রকে প্রকাশকের চিঠি, “সই করা চেক পাঠালুম, সংখ্যাটা বসিয়ে নেবেন”
২। Swami Vivekananda: যিনি সমগ্র বিশ্বকে ভারতের সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।
৩। Bhagat Singh and Batukeshwar Dutt: ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত পালাতে পারতেন, কিন্তু তাঁরা উচ্চস্বরে স্লোগান দিতে থাকেন ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’
এছাড়াও লর্ড কার্জনের বাংলা ভাগের সময় তিনিই প্রতিবাদ স্বরূপ ১৯০৫ খ্রিঃ রখীবন্ধন উৎসবের মধ্যে গেয়ে ওঠেন — “বাংলার মাটি, বাংলার জল” গানটি যা তৎকালীন সময়ে বিট্রিশ শাসকদের ভীত নাড়িয়ে দেয়। দেশ ভক্তির পাশাপাশি তিনি শিক্ষা চিন্তার ক্ষেত্রেও সুদূরপ্রসারী ছিলেন। তাঁর পরিচয় ভাববাদী দর্শনে পাওয়া যায়। তিনি সেখানে বলেছেন বিশ্বমানব চেতনার কথা। যা আমাদের প্রকৃত মানুষ হতে শেখায়। এই চিন্তামত্তাকে অনুসারী করেই তিনি বোলপুরে বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন এবং শ্রীনিকেতন শিক্ষায়তন প্রতিষ্টা করেন। এই মহান ব্যক্তির জন্মদিন রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎসব হিসেবে সারা দেশব্যাপী পালিত হয়। তিনি আজও তার কবিতা গান ও সাহিত্যের মধ্য দিয়ে রয়ে গেছেন আমাদের মধ্যে।