Home তথ্য গুচ্ছ সমুদ্রের জল লবনাক্ত কিন্তু নদীর জল কেন নয়, ভেবেছেন কখনও

সমুদ্রের জল লবনাক্ত কিন্তু নদীর জল কেন নয়, ভেবেছেন কখনও

সমুদ্রের জল লবনাক্ত,Somudrer jol lobanakto keno, ছবি: গুগল

Outlinebangla:আমরা সকলে জানি যে সমুদ্রের জল ভীষণ লবনাক্ত হয়ে থাকে। যে সকল ব্যক্তি সমুদ্রে স্নান করার সুযোগ পেয়েছেন তারা সকলেই এই বিষয়টিকে হাতে নাতে পরীক্ষা করে প্রমান পেয়ে গেছেন নিশ্চয়! ঠিক এই কারণেই পুকুর নদী টিউবঅয়েলের জল খাওয়া গেলেও সমুদ্রের জল কিন্তু খাওয়া যায় না। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন কি এতো নদী থাকতে সব লবন কেনো সমুদ্রের জলেই? অথচ সব নদী তো সেই সমুদ্রে গিয়েই মেশে। এর মধ্যেকার বিষয়টি কি?

আসলে বিষয়টি যা:

বিষয়টি খুবই সাধারণ। আসলে সমুদ্রের জলের লবন আসে ভুপৃষ্ঠের মধ্যেকার বিভিন্ন শিলা থেকে। এই সমস্ত শিলার মধ্যেই রয়েছে খনিজ। তবে এই শিলা গুলি যে নিজেদের ইচ্ছে মতো সমুদ্রের জলে এসে মেশে বিষয়টি ঠিক সেরকম নয়।
জলচক্রের ব্যাপারটির সঙ্গে আমরা সকলেই পরিচিত। প্রথমে জল বাস্পিভূত হয়ে মেঘের সৃষ্টি হয়, তারপর মেঘ থেকে বৃষ্টি সেই জল পুকুর, নদী ইত্যাদি হয়ে সমুদ্রে গিয়ে মেশে আবার একই ভাবে সেখান থেকে জল বাষ্প হয়ে মেঘ এই ভাবে চক্রাকারে ঘোরে। আর এর ভিতরেই লুকানো রয়েছে সমুদ্রের জল লবনাক্ত হওয়ার কারণ।


যখন বৃষ্টি হয় তখন বৃষ্টির জলও বাতাসে মিশে থাকা কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিলিয়ে তৈরী হয় কার্বনিক অ্যাসিড। বৃষ্টির জলেও সামান্য অ্যাসিড থাকে। এই অ্যাসিড মিশ্রিত বৃষ্টি টি ক্রমে মাটি পাথর পেরিয়ে গিয়ে শেষে সমুদ্রে গিয়ে মেশে। যখন পাথর গুলোর মধ্য দিয়ে অ্যাসিড যুক্ত বৃষ্টি প্রবাহিত হয় তখন পাথর গুলো ক্ষয়ে যায়। এইসময় নদীর স্রোতের সঙ্গে বৃষ্টির জলে শিলার মধ্যে থাকা আয়ন গুলোও সমুদ্রে গিয়ে মেশে।

নানান ছোট বড়ো জীব দ্বারা অপসারিত হয় এই জলে দ্রবীভূত হয়ে যাওয়া আয়নের একটি বিরাট অংশ। আয়নের বাকি অংশ টুকু দীর্ঘদিন পড়ে পড়ে জমা হতে থাকে। এই পড়ে থাকা আয়ন গুলো কিন্তু সমুদ্রের জলের সঙ্গে বাস্পিভূতও হয় না। দিনের পর দিন পড়ে থাকা আয়ন গুলো এইভাবে জমতে জমতে সমুদ্রের জলে দ্রবীভূত আয়নের ঘনত্ব বহুগুন বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন-Aircraft and lightning strikes: বজ্রপাতের সময় আকাশে থাকা বিমানের কি কোনো ক্ষতি হয়?

সমুদ্রের লবনাক্ত জলে যা থাকে:

সমুদ্রের জলে দুটি পদার্থ অতিরিক্ত পরিমানে থাকে একটি ক্লোরাইড অন্যটি হলো সোডিয়াম। ৯০ শতাংশেরও বেশি আয়ন তৈরী করে এদুটি একসঙ্গে। যদিও সোডিয়াম ও ক্লোরাইড স্বাদেই লবনাক্ত। অনুমান করা হয় পৃথিবীর সমুদ্রে অবস্থিত সমস্ত লবন যদি তুলে নিয়ে সমস্ত স্থলভাগের উপর সমপরিমানে ছড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে সে লবণের স্তুপের উচ্চতা হবে ৫০০ ফুট! যা ৪০ তলা একটি বিল্ডিংয়ের সমান।

নদী কিংবা হ্রদের জল লবনাক্ত হয় না:

সমুদ্রের জল লবনাক্ত কেন হয় এ তো গেলো তার ব্যাখ্যা। তাহলে নদী কিংবা হ্রদগুলির জল লবনাক্ত হয় না কেন? নদী বা হ্রদের বৈশিষ্ট্য হলো এদের সবসময়ই জল প্রবাহিত হয় অর্থাৎ জল একদিক দিয়ে ঢুকে অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। এই প্রক্রিয়ার ফলে জলে দ্রবিভূত আয়ানও বেরিয়ে যায় এবং শেষ অবধি সমুদ্রে গিয়ে জমা হয়। আবার এই জলপ্রবাহই নদীগুলির জলকে লবনমুক্ত ও বিশুদ্ধ রাখে। এটিই সমুদ্রের ক্ষেত্রে বিশাল এলাকা জুড়ে ঢেউ বয়লেও, বিরাট এই সামুদ্রিক খাঁচাতেই বন্দি রয়ে যায় লবনাক্ত জল। ঠিক এই কারণেই সমুদ্রের জল লবনাক্ত এবং নদীর জল সুপেয়।
আরও পড়ুন-Salt is Essential to Life: লবন ছাড়া কি বাঁচা সম্ভব?

আমেরিকার গ্রেট সল্ট লেক কিংবা মরু সাগরে প্রবাহিত জল অন্যান্য লেক বা নদীর মতো বেরোয়না বা ঢোকেও না ফলস্বরূপ এদের লবণত্ব অন্য সমুদ্র গুলোর তুলনায় অধিক।

Exit mobile version