Social media detox: মানসিক স্থিরতা ফেরাতে করুন সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স, হোন আরও প্রোডাক্টিভ

Outlinebangla: একবিংশ শতাব্দীতে এসে দাঁড়িয়ে তথ্যপ্রযুক্তির একদিকে যেমন উপকারী দিক রয়েছে,অন্যদিকে মারাত্মক কয়েকটি অপকারী দিকও রয়েছে , তবে এই লিস্টের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি (social media detox)। বর্তমান সমাজে যেটি সবথেকে বেশি চিন্তার বিষয়। সোশ্যাল মিডিয়া-আসক্তের সংখ্যা প্রায় ২১ কোটি! সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গেছে, ইতোমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ার বিরূপ প্রভাবকে কেন্দ্র করে নিজস্ব বক্তব্য তুলে ধরেছেন নানান টেক কোম্পানির প্রাক্তন কর্মকর্তারা।

ফেসবুকের একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা এবং সোশ্যাল ক্যাপিটালের সিইও চামাথ পালিহাপিটিয়া ২০১৭ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা ডোপামিনচালিত যে স্বল্পমেয়াদী প্রতিক্রিয়ার লুপের সৃষ্টি করেছি, তা এই সমাজকে ধ্বংস করছে। তিনি এটিও বলেন, এই প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এটি ফেসবুকের বেশিরভাগ কর্মকর্তাই জানতেন। যদিও সেটা তারা কাউকে না জানিয়ে নিজেদের মনেই মধ্যেই চেপে রেখে দেন।

তাই আমাদের সকলকে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার একটি পর্যায় পর্যন্ত গিয়ে কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করা উচিত (social media detox)। এটা করলে সোশ্যাল মিডিয়ার উপযোগীদিক গুলি ব্যবহার করার পাশাপাশি বাজে দিক থেকে রক্ষা পাওয়াও যাবে। কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়া-আসক্তি কমিয়ে আনা যায় আজকে সেই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করব আমরা।

What is digital detox

সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স কি (What is digital detox):

চামাথ পালিহাপিটিয়ার সেই সাক্ষাতকার অনুযায়ী কয়েকদিনের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে নিজের বাস্তব জীবনের দিকে মনোযোগ দেওয়াই হলো এককথায় সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স।
আরও পড়ুন- Increase productivity at work: কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর এই ১০ উপায় জানতেই হবে

কখন সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স প্রয়োজন (When detox):

সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স তখনই প্রয়োজন, যখন কোনো ব্যাক্তি সোশ্যাল মিডিয়াতে অত্যাধিক পরিমানে আসক্ত হয়ে পড়ে। আর এটি বোঝার উপায় হলো সেই ব্যাক্তিটির মধ্যে বিশেষ কয়েকটি লক্ষণ স্পষ্টভাবে দেখা দেবে। খেয়াল করলে দেখবেন তিনি যখনই কর্মব্যস্ততার মাঝে একটু সময় পান, নিজের অজান্তেই তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢুকে পড়েন আর এরপর সেখানেই কাটিয়ে দেন প্রায় পুরো সময়টাই।

এছাড়াও বেশিরভাগ সময়ই নিজের বাস্তব জীবনের সঙ্গে অন্য মানুষের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জীবনের তুলনা করে হীনম্মন্যতায় ভোগেন তিনি। পাশাপাশি নিজেকে মোবাইলের থকে দূরে সরিয়ে রাখা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে, এমনকি পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সময়েও তিনি মোবাইলের সঙ্গেই লেগে থাকছেন। ফলস্বরূপ পরিবারের সকলের মনঃক্ষুণ্ণ হচ্ছে মারাত্মকভাবে। এইধরণের লক্ষণগুলি যদি কারোর মধ্যে দেখা যায়, তাহলে দ্রুত তার সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্সের দরকার।

সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স যেভাবে করবেন (detox social media):

detox social media
অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো ডিলিট করুন:
প্রথমে নির্ধারণ করুন যে কোন কোন অ্যাপগুলো আপনার সময় বেশি নষ্ট করছে। এবার সেই অ্যাপগুলোকে মুছে ফেলুন। কারণ, আপ গুলি ডিলেট না করলে সেগুলো থেকে দূরে সরে থাকা আপনার জন্য অধিক কষ্টের বিষয় হবে, যেহেতু এরকমভাবেই সেগুলো বানানো হয়েছে। কিন্তু যদি আপনার মনে হয় যে মুছে ফেলার পর আবার পরে ইন্সটল করা ঝামেলার, এটির জন্য আপনার মোবাইলেই থাকা কিছু চমৎকার ফিচারের সাহায্যে আপনি অ্যাপগুলো থেকে কিছুদিনের জন্য বিরতি নিতে পারেন।

এখনকার প্রায় সমস্ত স্মার্টফোনেই ‘Digital Wellbeing’ নামক ফিচারটি থাকে, যার সাহায্যে আপনি ইচ্ছামতো অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলি থেকে কয়েকদিনের জন্য ছুটি নিতেই পারেন। এই বিশেষ ফিচারটির কাজ হলো নোটিফিকেশন বন্ধ রাখা নিদিষ্ট আপ টির এবং সেই অ্যাপেটিতে প্রবেশ করতে আপনাকে বাধা দেওয়া । তবে বিভিন্ন ধরণের মোবাইলে বিভিন্ন নামে থাকে এই বিশেষ ফিচারটি । আপনাকে শুধু একটু কষ্ট করে সেটিং ঘেঁটে বের করতে হবে তাহলেই হবে।
আরও পড়ুন- Brain function: মস্তিষ্ক যেভাবে সরিয়ে দিতে পারে আপনার শারীরিক ব্যাথা

সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট ব্লক করুন:
আমরা প্রত্যেকে অত্যাধিক সময় নষ্ট করে থাকি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেই। অপরদিকে যেহেতু আমরা কম্পিউটার ব্যবহার করি, তো সেখানেও কিন্তু আমরা একটি উল্লেখযোগ্য সময় ব্যয় করে থাকি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের পিছনে। যে কারণে আমাদের উচিত সোশ্যাল মিডিয়ার ডেস্কটপ ওয়েবসাইটও ব্লক করে রাখা, ডিটক্স চলার সময়টুকু। এজন্য অনেক ডেস্কটপ এপ্লিকেশন বা এক্সটেনশন রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে ম্যাকের জন্য Self-Control’ অ্যাপ্লিকেশন এবং উইন্ডোজের জন্য ‘Self-Control’ ক্রোম এক্সটেনশন উল্লেখযোগ্য। কাজের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে বাধা দেবে উল্লেখিত Digital wellbeing’ ফিচারগুলি।

নিজের উন্নতি পর্যবেক্ষণ করুন:

আপনি কতক্ষণ সময় মোবাইলে ব্যয় করেছেন আপনার স্ক্রিন টাইম পর্যবেক্ষণ করে আপনাকে বলে দেবে এরকম বিভিন্ন আইওএস বা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স চলাকালীন অথবা ডিটক্সের পরবর্তীকালে নিজের মোবাইল ব্যবহারের সময়ে খেয়াল রাখুন। যে মুহূর্তে আপনি বুঝতে পারবেন সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিদিন আপনার আসক্তি কমে আসছে, সেই মুহূর্তে আপনি আলাদা মানসিক শান্তি অনুভব করবেন। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে আসক্ত না হয়ে পড়ার ব্যাপারটাতেও নিজেক সতর্ক করবেন।

একটি অ্যালার্ম-ঘড়ি কিনুন:
ঘুম থেকে উঠেই না বুঝেই আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বেড়াজালে জড়িয়ে পড়ি ফোনের অ্যালার্ম বন্ধ করার চক্করে। পাশাপাশি ফোনের অ্যালার্ম ব্যবহারের জন্য ‘Blue light’ নামক যে ক্ষতিকর রশ্মি আছে সেটি ঘুমোনোর আগে চোখে পড়ার জন্য আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। ঠিক এই কারণেই যদি আবার আমরা আগের পুরনো রীতির অ্যালার্ম ঘড়িতে ফেরৎ যাই, তাহলে এসমস্ত সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে সহজেই।

digital detox

সকালে যোগব্যায়ামের অভ্যাস গড়ুন:

এখন আমরা যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইলের পিছনে ব্যয় করছি না তখন সকালে, সময়টুকু ভালো কিছু করতে হবে,যেটি আমাদের মনোযোগ দৃঢ় করার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করবে আর এই লক্ষ্যটি পূরণ করতে যোগব্যায়ামের উর্দ্ধে কেউ নেই।
আরও পড়ুন- Meditation health: সম্পূর্ণরূপে ফিট থাকতে মেডিটেশনের সুফল গুলি আপনাকে জানতেই হবে

প্রবল ইচ্ছাশক্তি ধারণের ক্ষমতা তৈরী করুন:
একজন মানুষের মধ্যে সবথেকে আগে যেটি থাকা প্রয়োজন সেটি হলো প্রবল ইচ্ছাশক্তি যদি সে সফলভাবে কোনো কাজকে সম্পন্ন করতে চায়। আপনাকে নিজেকেই এটি বিশ্বাস করতে হবে যে আপনি নিজেকে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি থেকে দূরে সরিয়ে নিজেকে একটি সুন্দর নতুন রূপ দেবেন। তাতে আপনাকে যে কঠিন পরীক্ষার মধ্যে দিয়েই যেতে হোক না কেন, সেটা অতি সহজেই আপনি পার করে আসতে সক্ষম হবেন।

অনলাইনে ব্যয় করা সময়টিকে উৎপাদনশীল কাজে খরচ করুন:
প্রতিদিন একজন মানুষ গড়ে ২ ঘণ্টা ২৭ মিনিট মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করে থাকেন। এই আড়াই ঘণ্টা সময়টি যদি নতুন কোনো উৎপাদনশীল কাজের পেছনে ব্যয় করতে পারতেন, তাহলে এটি আপনার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ভীষণভাবে উপকারী হতো। নিজেকে সেই সময়ে শারীরিক ব্যায়াম, বই পড়া অথবা নতুন কোনো বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে ব্যস্ত রাখতে পারেন।

সম্পর্কিত পোস্টগুলি

আমাদের ফলো করুন

3,920FansLike
47SubscribersSubscribe

না পড়লেই মিস