Outlinebangla: রহস্যেঘেরা আমাদের পৃথিবীর অনেককিছু জানলেও এখনও আমাদের বহু কিছুই অজানা। জানার মধ্যে এই কটা মহাসাগর কতগুলি নীলগিরি বা সুউচ্চ পর্বতমালা বা কটা ছোটো খাদ। এগুলো ছাড়াও নিগুড় স্থান রয়েছে যে গুলোর রহস্যেমোড়া চেহারা আজও অজানা। এরকমই কয়েকটি অজানা গোলাপি হ্রদ (Pink Lakes) রয়েছে। যে হ্রদ গুলি সম্পর্কে সকলেরই জানা জরুরী (The Story of Pink Lakes)।

লাগোনা কলোরাডা, বলিভিয়াঃ (Laguna Colorada-Bolivia)
আন্দিজ পর্বতমালার পাদদেশের অদূরে মহাসমুদ্রের পাথুরে উপকূলের কাছে অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর লাগোনা কলোরাডা হ্রদটি অবস্থিত। ২৩ বর্গমাইল পর্যন্ত বিস্তৃত এই হ্রদটির সর্বাধিক উচ্চতা হলো ৫ ফুট। চিলির সীমানা ঘেঁষে বিস্তৃত হওয়ায় এটি অগভীর চিলিয়ান, আন্দিয়ান ও বিপন্ন ফ্ল্যামিংগোদের জন্যও এক মনোরম অবসর বিনোদন স্থান। ভ্রমন পিপাষুদের কাছেও ভীষণ নিরাপদ ছোট ছোট নয়নাভিরাম গ্রামে পরিবেষ্টিত স্থান গুলি। চাইলে পর্যটকেরা গ্রামগুলিতে রাত্রিযাপন করতেই পারেন।

হাট, উপহ্রদ অস্ট্রোলিয়াঃ (Hutt Lagoon-Australia)
সৌন্দর্যে ভরপুর এই লেকটি মৎস আহরণের জন্য খুব পরিচিত। অস্ট্রোলিয়ার পোর্ট গ্রেগরি গ্রামে অবস্থিত এই হ্রদটি তার ঝলমলে গোলাপি রঙ লেকের চারিদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে। এই হ্রদটিকে সবচেয়ে সুন্দর দেখতে লাগে একদম ভোরের দিকে এবং সূর্যাস্তের সময়টাতে। ২৭ বর্গমাইলের এই হ্রদটি নানান ঋতুতে তার গোলাপি আবরণটির পরিবর্তন নিয়ে আসে। চারিপাশ রেঙে ওঠে বিচিত্র নানান রঙে। লেকটির প্রধান রঙ গোলাপি হলেও এর পরিবর্তন হওয়া ভিন্ন রঙগুলি সমানভাবেই আকর্ষিত করে পর্যটকদের মন।

লাস স্যালিনাস দে তোরেভিজা, স্পেনঃ (Las Salinas de Torrevieja-Spain)
গভীর সমুদ্রের নোনা জল থেকে লবন সংগ্রহ করার জন্য ত্রয়দশ শতকের রৌদ্রজ্বল এক দিনে লেকের সঙ্গে খনন করা হয় ছোট্ট একটি খাল। যার ভেতর দিয়ে লবন জমতে থাকে এই লেকে, সৃষ্টি হতে থাকে এক বর্ণিল আভা।পরবর্তীকালে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লেকটি পরিবর্তিত হয় গোলাপি হ্রদে। হাজার হাজার জলজ পাখি ও ফ্ল্যামিংগোর আনাগোনা শুরু হয় এই হ্রদের প্রাণীদের প্রজননের সময়টিতে। এই সময় আপনি সেখানে গেলে আপনার মন আনন্দে ভরে উঠবেই।

লেক হিলিয়ার, অস্ট্রোলিয়াঃ (Lake Hillier-Australia)
পশ্চিম অস্ট্রোলিয়ার ছোট্ট দ্বীপে অবস্থিত এই হ্রদটি ১৮০২ সালে সদ্য আবিষ্কৃত হওয়ার পর পরই সাড়া ফেলে দেয় গোটা বিশ্বে তার অতুলনীয় মায়াবী গোলাপি আভা দ্বারা। ১,৯৬৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮২০ ফুট চওড়া যুক্ত এই হ্রদটিকে দেখতে দেশ বিদেশের নানান প্রান্ত থেকে আগ্রহী পর্যটকরা দলে দলে ছুটে আসে। তাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে হেলিকোপটারের ব্যবস্থা করে রেখেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষগণ। যেখান থেকে লেকটির প্রশংসনীয় বিভিন্ন ছবি তোলা সম্ভব। এছাড়াও লেকটির সৌন্দর্য আরও দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে তারই পাশে অবস্থিত বিশ্বের শীতলতম ছয়টি শুভ্র সৈকত।

লেক ন্যাট্রোন, তানজানিয়াঃ (Lake Natron-Tanzania)
উত্তর তানজানিয়া এবং কেনিয়া সীমান্তে অবস্থিত টকটকে গোলাপি এই হ্রদটি লক্ষ লক্ষ ফ্ল্যামিংগোর আবাস্থল হিসাবে পৃথিবী জুড়ে পরিচিত। যদিও রিফ্ট ভ্যালির সক্রিয় আগ্নেয়গিরির নিচে অবস্থিত এই হ্রদ টির তাপমাত্রা ১৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই হ্রদটির আশপাশ প্রাণী বসবাসের একেবারেই যোগ্য নই কারণ হ্রদটির ক্ষরীয় জলের পিএইচ ১০.৫ এর মতো। এছাড়াও হ্রদে কস্টিক অভিযোজন উপস্থিত না থাকায় প্রাণীদের চোখ ও ত্বক পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সিভাশ লবন উপহ্রদ, রাশিয়াঃ (Sivash Salt Lagoons-Russia)
২২০ মিলিয়ন মার্কিন টন লবণের মজুদদার গোলাপি সিভাশ উপহ্রদগুলি কৃষ্ণসাগর ও আজভ সাগরের মধ্যেকার ক্রিমিয়ান উপদ্বীপে অবস্থিত। হ্রদগুলির জল অগভীর হলেও এটি ক্রিমিয়ান উপদ্বীপের অর্থনীতির এক অপরিহার্য দিক। কারণ প্রত্যেক মৌসমে আন্তর্জাতিক ভাবে এই লবন গুলি সংগ্রহ করা হয় রপ্তানির উদ্দেশ্যে।

লেক রেটবা, সেনেগালঃ (Lake Retba-Senegal)
সেনেগালে অবস্থিত মাত্র ১ বর্গমাইলের এই গোলাপি হ্রদটি স্থানীয় জনগনের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছেও সমানভাবে জনপ্রিয়। বছরের নানান সময় হ্রদের নিচ থেকে প্রচুর পরিমানে লবন সংগ্রহ করে থাকেন সংগ্রহকরা। এছাড়াও স্নিগ্ধ এই হ্রদের গোলাপি জলের চারিদিকে বিশাল বিশাল লবন পাহাড়ের খোঁজ মেলে। নভেম্বর জুনের মধ্যবর্তী সময়ে হ্রদের গোলাপি আভা সবচেয়ে বেশি আলোক বিচ্ছুরণ করে। এই সময়টিকে পর্যটকদের ঘুরতে যাওয়ার জন্য সেরা সময় বলে বিবেচিত করা হয়।
জলের রঙ গোলাপি হওয়ার কারণঃ
গোলাপি রঙের হ্রদ হওয়া একটি অতি প্রাকৃতিক বিষয়। এটি মোটেই কোনো অপটিক্যাল ইলুশন না। বিশ্বের সমস্ত হ্রদ গুলির একসঙ্গে তুলনা করতে বসলে দেখা যাবে সবগুলিই লবণাক্ত। প্রকৃতিবিদদের মতানুযায়ী এরকম অনন্য রঙ সৃষ্টির মূল কারণ হ্রদগুলির অতিরিক্ত পরিমানে লবনতা।
তবে আলাদা করে প্রত্যেকটি হ্রদের গোলাপি রঙ হওয়ার পিছনের কারণ গুলি সঠিক ভাবে নির্ণয় করা হয়নি। গবেষকদের মতে হ্রদ গুলির অতিরিক্ত পরিমানে লবনাক্ততা কিছু সংখ্যক জীবাণুদের এই ধরনের বিরূপ পরিবেশে গড়ে উঠতে সায় দেয়। এরকমই একটি জীবাণু হলো হ্যালোফাইল মাইক্রোশ্যাওলা। এটিরই আরেকটি নাম Dunaliella Salina নামেও পরিচিত। এই জীবাণুগুলি বিটা ক্যারোটিনের মতো ক্যারোটিনয়েড তৈরী ও জমা করে জলের উপরিস্তরের পর্যাপ্ত আলো, তাপ ও লবনাক্ত স্তরের সঙ্গে মিশে। এগুলির কারণেই হ্রদের জলগুলি গোলাপি রঙের হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ
১) সমুদ্রের জল লবনাক্ত কিন্তু নদীর জল কেন নয়, ভেবেছেন কখনও
২)Artificial Intelligence: ভবিষ্যতে এই সব চাকরির চাহিদা থাকবে তুঙ্গে
৩)Aircraft and lightning strikes: বজ্রপাতের সময় আকাশে থাকা বিমানের কি কোনো ক্ষতি হয়?