Outlinebangla: জল যেমন একদিকে আমাদের জীবন বাঁচাতে পারে অন্যদিক আবার জীবন কেড়ে নেওয়ার ও ক্ষমতা রাখে। সঠিক পরিমানে জল পান আমাদের সুস্থ সবল জীবন উপহার দিলেও মাত্রাতিরিক্ত জল আমাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। অপর্যাপ্ত পরিমান জল খেয়ে জটিল সমস্যার মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিক পরিমানে জল পান করে শারীরিক বিষয়গুলিতে সচেতন থাকা উচিত।
ঠিক কতটা জল পান করা প্রয়োজন:
ডাক্তারেরা সাধারণত কর্মক্ষম ও প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের ২-৩ লিটার জল পান করতে বলেন। যদিও এটি নির্ভর করে আবহাওয়া, ঘামের পরিমান ও দৈহিক শ্রমের উপর। যেসমস্ত ব্যক্তিরা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঘামেন,যারা অতিরিক্ত দৈহিক পরিশ্রম করেন সেইসমস্ত ব্যক্তিদের স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি জল পান করা উচিত। এছাড়াও গরমকালে জলের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায় শীতকালের তুলনায়, তাই আমাদের জানা উচিৎ কতটা জল পান করা প্রয়োজন শরীরের জন্য।
ঠিক এই কারণগুলির জন্যই বিশ্বব্যাপী জল পান করার নিদিষ্ট কোনো মাপকাঠি নেই। এক গবেষনাতে দেখা গেছে, প্রতিদিনকার জলের চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ দৈনন্দিন খাবার থেকেই মিটে যায় বাকি ৮০ শতাংশ জল কিংবা অন্যান্য পানিয়ের দ্বারা পূরণ করে থাকে যুক্তরাষ্ট্রর ব্যক্তিবর্গ।
আমাদের প্রতিদিনকার খাওয়া শাকসবজি, ফলে অধিক পরিমানে জল থাকে। এছাড়াও চা, দুধ কফি থেকেও আমাদের দেহে জলের সরোবরাহ হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড মেডিসিনের নির্দেশনা অনুসারে দৈনন্দিন খাবার থেকে প্রাপ্ত জল ও সরাসরি জল পান করা দুটো মিলিয়ে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর ক্ষেত্রে জল পান করার পরিমান হওয়া উচিত ২.৭ লিটার, যেটা একজন পুরুষের ক্ষেত্রে ৩.৭ লিটার।
মনে রাখা দরকার স্তন্যদানকারী ও গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে দৈনন্দিন জলের চাহিদা একটু বেশি অপরদিকে বাচ্ছাদের ক্ষেত্রেও বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দৈনিক জল পানের চাহিদাও বাড়তে থাকে।
Read More-weight loss drinks: গরমের দিনে এই পাঁচ পানীয়তেই কমবে ওজন
জল পান না করলে যে সমস্ত সমস্যায় পড়তে হবে:
আমাদের শরীরে প্রায় ৬০ শতাংশই জল। মাথাব্যথা, খিটখিটে মেজাজের সঙ্গে ত্বক রুক্ষ শুস্ক হয়ে যাওয়া, কোষ্টকাঠিন্য,অল্পতেই ক্লান্তিভাব,বমি বমি ভাব পেশীতে টান ধরার মতো বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় পর্যাপ্ত পরিমানে জল পান না করলে। ২০২০ তে হওয়া এক গবেষণা অনুযায়ী সঠিক পরিমান জল পান না করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এগুলি ছাড়াও কিডনিতে পাথর, মূত্রনালিতে ইনফেকশন, কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া, উচ্চরক্তচাপ তো আছেই।
অত্যাধিক পরিমানে জল পানের ক্ষতিকর দিকগুলি :
সঠিক পরিমানে জল পান করার ফলে আমাদের দেহের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে পাশাপাশি আমাদের শরীর সুস্থ সবল রাখতেও এটি গরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা সকলেই জানি আমাদের শরীরের পান করা জলটির ছাঁকনি হিসাবে কাজ করে কিডনি। তবে নিদিষ্ট মাত্রার বেশি (১লিটার ) জল পান করলে কিডনি মূত্রের মাধ্যমে আর সেই জলটাকে বের করতে পারে না।বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে কয়েকঘন্টার মধ্যে 3-4লিটারের বেশি জল পান করা। শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
প্রথমের দিকে ক্লান্তিভাব, বমিভাব ও মাথাব্যথার মতো নানান সমস্যা দেখা দিলেও পরে অধিক পরিমান জল পান করার ফলে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমে গিয়ে হাইপোন্যাট্রেমিয়া রোগটির সৃষ্টি হয় যার ফলে আমাদের শরীরের কোষ গুলি স্ফীত হতে শুরু করে এমনকি একটা সময়ে মস্তিষ্কের মধ্যেকার কোষ স্ফীত হওয়ার কারণে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া অথবা কোমায় চলে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। সেরকম পর্যায়ে পৌঁছালে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যদিও এসব কারণে মৃত্যুর সংখ্যা খুবই নগন্য তবে অস্বাভাবিক কিন্তু নয়।
Read More-Sexual Health: ওষুধ নয়, শারীরিক মিলনে কমবে ব্যথা
মূলত ম্যারাথন দৌড়ে অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগী এবং মিলিটারি প্রশিক্ষনকারীদের মধ্যেই অধিক জল পানের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি একটু বেশি। জোর জবরদস্তি কাউকে অত্যাধিক পরিমানে জল পান করিয়েও মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া সম্ভব। এছাড়াও মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এই ভাবে মৃত্যু লক্ষ্য করা যায়।
তাই সঠিক পরিমানে জল পান করার ব্যাপারে আমাদের নিজেদের সচেতন হওয়া উচিত। যকৃত ও হৃদরোগে ভুগতে থাকা রোগীদের কিডনির সমস্যা যুক্ত রোগীদের ডাক্তারেরা মেপে জল পান করতে বলেন, কারণ এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমানের বাইরে জল পান করলে শরীরের জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। নিজেদের শরীরের সঠিক পরিমান জলের চাহিদা মেটানোর জন্য অন্যতম একটি মাধ্যম হলো ‘তেষ্টা ‘যখনই তেষ্টা পাবে তখনই জল পান করে জলের তেষ্টা মিটিয়ে নেবেন। এছাড়াও বয়স, আবহাওয়া,ব্যক্তির লিঙ্গ, ওজন , শারীরিক শ্রম ইত্যদি বিষয়গুলি মাথায় রেখে জল পান করতে পারেন।