Outlinebangla: ছোট্ট একটি মেয়ে, যার স্বপ্ন ছিল আকাশ ছুঁয়ে দেখার। স্বপ্ন ছিল নিজের চোখে বিমান দেখার। একারণেই তো তিন আঙ্গুলে পেন ধরতে শিখেই খেলার ছলে খাতা পেন নিয়ে বসে যেত বিমানের ছবি আঁকার জন্য। ছোট্ট মেয়েটি মাঝে মাঝে বাবার কাছে বায়না ধরত বিমান দেখাতে নিয়ে যাবার। নিশ্চয় বুঝে গেছেন কার কথা বলতে চলেছি! মেয়েটির নাম কল্পনা চাওলা (Kalpana Chawla)। ভারতে বংশোদ্ভূত প্রথম নারী, যিনি মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন (Kalpana Chawla)।
১৯৬২ সালের ১৭ মার্চ কল্পনা চাওলা (Kalpana Chawla) হরিয়ানার কারনাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শ্রী বেনারসী লাল চাওলা এবং মাতার নাম সঞ্জ্যোতি। বাবা মায়ের চার সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। কল্পনার (Kalpana Chawla) ডাকনাম ছিল ‘মন্টো’। আমরা অনেকেই জানি সে সময় ভারতে মেয়েদের পড়াশুনার চল খুব বেশি ছিল না। তবে তার মায়ের পরিশ্রম আর স্বাধীনচেতা মনের জন্য কল্পনা চাওলা (Kalpana Chawla) ও তার বোনেরা পড়াশুনা করতে সক্ষম হয়েছেন। কথাতেই আছে মায়ের গুনে মেয়ে প্রভাবিত হয়। তাই তো শৈশব থেকেই কল্পনা ছিলেন অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী। জানা যায়, কল্পনার বাবা তাকে ডাক্তার বা শিক্ষিকা বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কল্পনার স্বপ্ন ছিল আকাশ ছুঁয়ে দেখার।
আরও পড়ুনঃ Alexander the great: মহান দিগ্বিজয়ীর আড়ালে এক অজ্ঞাত দার্শনিক

কল্পনা চাওলা নামের কাহিনীঃ
১৯৭৬ সালে হরিয়ানার কারনালের ট্যাগোর বাল্য বিদ্যালয়ে কল্পনাকে ভর্তি করা হয়। তখন স্কুলের এক দিদিমণি তার নাম জানতে চায়। তখন কল্পনার মাসি জানান সেভাবে এখনও নামকরন করা হয়নি। তবে তাদের পরিবারের বিবেচনায় তিনটি নাম দিদিমণি কে বলেন। কল্পনা, সুনয়না আর জ্যোৎস্না-এমত অবস্থায় দিদিমণি কল্পনাকে জিজ্ঞাসা করেন তোমার কি নাম পছন্দ? তখন কল্পনা নির্দ্বিধায় উত্তর দেয় কল্পনা চাওলা। পড়াশুনায় মনোনিবেশের পর বিজ্ঞান ছিল তার প্রিয় বিষয়।
১৯৭৮ সালে দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় ভালো ফলাফল নিয়ে উত্তীর্ণ হয়। এর পরে, ১৯৮২ সালে তিনি চণ্ডীগড় থেকে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। তিনি তার ব্যাচে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন। এবং ১৯৮৪ সালে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। এর পরে, কল্পনা ১৯৮৮ সালে কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অফ ফিলোসফি ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বছর কল্পনা নাসার এমস রিসার্চ সেন্টারে কাজ শুরু করেন। ১৯৯৩ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার ওভারসেট মেথডস ইনকরপোরেশন নামে কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৯৪ সালে, কল্পনা চাওলা মহাকাশচারী হিসাবে নির্বাচিত হন। ১৯৯৫ সালে মহাকাশচারী হিসেবে জনসন স্পেস সেন্টারে প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ Mahatma Gandhi: আদর্শে নয়, রাজনীতির রনাঙ্গনে পকেটেই সীমাবদ্ধ গান্ধীজি

প্রথম মহাকাশ যাত্রাঃ (Kalpana Chawla First Space Flight)
নভোচারী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর জনসন স্পেস সেন্টারে একবছর প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৯৬ সালের নভেম্বর মাস মহাকাশ ফ্লাইট এসটিএস-৮৭ (STS-87)-এ মিশন রোবটিক আর্ম অপারেটরের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। এবং ১৯৯৭ সালে ১৯ নভেম্বর কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে এসটিএস-৮৭ (STS-87) এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো মহাকাশে উড়েছিলেন। এবং পৃথিবীতে ফিরে এসেছিলেন ১৯৯৭ সালের ৫ ডিসেম্বর। কল্পনা চাওলা তাঁর স্বপ্নের উড়ানের মধ্যে মহাকাশে ৩৬০ ঘন্টা কাটিয়েছিলেন। এই পুরো সময়টার মধ্যে তিনি পৃথিবীকে ২৫২ বার প্রদক্ষিণ করেন।

অন্তিম মহাকাশ যাত্রা: (Kalpana Chawla Last Space Flight)
৪১ বছর বয়সে কল্পনা চাওলা পুনরায় ২০০০ সালে এসটিএস-১০৭ (STS-107) মিশনে তাকে মিশন স্পেশালিস্ট হিসেবে নির্বাচন করা হয়। এই মিশন ২০০১ সালের জানুয়ারিতে যাত্রা শুরু করার কথা থাকলেও তা বিলম্বিত হয়ে গিয়ে ২০০৩ সালে কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে লঞ্চ করা হয়। এই স্পেস সাটলটি ১৫ দিন ২২ ঘণ্টা মহাকাশে অবস্থান করে। এই স্পেস সাটলটি এক টুকরো ফোম শাটলটির বাম পাশের অরবিটারের ক্ষতিসাধন করে। যার জেরে সাটলটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবং কেনেডি স্পেস সেন্টারে অবতরণের ১৬ মিনিট আগেই স্পেস ক্রাফটটি টেক্সাসের আকাশে বিস্ফোরিত হয়। এই ঘটনায় অভিযানের সাত অভিযাত্রীই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পরে। এটাই কল্পনা চাওলার দ্বিতীয় ও শেষবারের মতো অভিযান ছিল।
আরও পড়ুনঃ Chaitanya Mahaprabhu: হিন্দু সংস্কৃতির অবক্ষয় রুখতে ভাব-বিপ্লবের প্রসার ঘটিয়েছিল চৈতন্যদেব
স্বপ্নের উড়ানের নায়িকা কল্পনাঃ
উথার ন্যাশনাল পার্কে সমাহিত করা হয় স্বপ্নের উড়ানের নায়িকা কল্পনাকে। আত্মার প্রতি সম্মান জানিয়ে ভারত প্রথম মেটোরোলজিকাল স্যাটেলাইট এর নাম রাখেন ‘কল্পনা-১ (kalpana-1)। এছাড়াও কল্পনার স্মৃতির জন্য মঙ্গল গ্রহের কলম্বিয়া হিল চেইনের একটি চূড়াকে কল্পনা হিল নামে নামকরণ করা হয়।
Outlinebangla ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন https://youtube.com/@outlinebangla