Plaster of Paris: হাড় ভাঙার চিকিৎসাতে কিভাবে এল প্লাস্টার অফ প্যারিস, ভেবেছেন কখনও

Outlinebangla: হাড় মানুষের শরীরের এমনই এক জিনিস যেটার আলাদা ভাবে যত্নআত্তির প্রয়োজন পরে না। সুতরাং হাড়ের কথা সেভাবে কেউ মনে করে না। কিন্তু যখনই ভাঙে বা চিড় খায় তখনই ব্যাস্ত হয়ে বরফ আন, মালিশ কর, বেশি কিছু হলে প্লাস্টার কর ইত্যাদি Plaster of Paris! কথাতেই আছে মানুষ জিনিসের কদর তখনই দেয়, যখন সেটার গুরুত্ব বোঝে। ভাঙা হাড়ে কী ভাবে জোড়া লাগানো যায়, তা নিয়েই আজকের লেখা।

প্রথম দিকের গল্প (Early stories):

ইউরোপে হাড় ভাঙার চিকিৎসায় Plaster of Paris ব্যবহারের প্রক্রিয়াটি উনিশ শতকের শুরুর দিকে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। এই প্রক্রিয়াটাকে বলা হয় ‘platre coule’। ভাঙা জায়গাটিকে ঘিরে একটি কাঠের কাঠামোর ভিতরে ঢেলে দেওয়া হতো প্লাস্টার অফ প্যারিসটিকে। রোগী বিছানা ছাড়তেই পারতো না এই প্লাস্টারটির ভারে। এরপরেও পা ভাঙার চিকিৎসাতে এই পদ্ধতিটিই জনপ্রিয় ছিল।
রোগীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে স্টার্চ ব্যান্ডেজের প্রচলন করেন বেলজিয়ানের স্বনামধন্য চিকিৎসক লুইস সিউটিন। লাফার্গ স্টার্চ দ্রবনের সঙ্গে প্লাস্টার অফ প্যারিস পাউডার মিশিয়ে লিনেন ব্যান্ডেজের উপর প্রথম প্রয়োগ করেন ১৮৩৯ সাল নাগাদ। এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করার ফলে প্লাস্টারের জোড়া লাগার যে সময়টা সেটা কমে গিয়ে ছয় ঘন্টায় নেমে গিয়েছিলো।

Plaster of Paris

যেভাবে কাজ করে প্লাস্টার অফ প্যারিস (How Plaster of Paris works):

Plaster of Paris তৈরী করা হয় ১২০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় উত্তপ্ত অবস্থায় খনিজ জিপসামে (CaSO4.2H2O) জল অপসারণ করে। এটির রাসায়নিক নাম ক্যালসিয়াম সালফেট হেমিহাইড্রেট (CaSO4.1/2H2O) যেটি মূলত পাউডার আকারে আদ্রতামুক্ত পাত্রে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। প্লাস্টার অফ প্যারিসের সঙ্গে যখন পুনরায় জল মেশানো হয় সেটি ৫-১৫ মিনিটের মধ্যে আবার জিপসামে পরিণত হতে হতে একসময় শক্ত আকার ধারণ করে, ভাঙা জায়গাটিতে ব্যান্ডেজের উপরে শক্ত কাঠামোটি অস্থি ও অস্থিসন্ধিকে অনড় করে রাখে।
আরও পড়ুন- Importance of mental health during pregnancy: গর্ভবস্থায় মানসিক চাপ আপনার ঝুঁকির কারণ

কেবল ভাঙা স্থানই নয়, মাংসপেশী নিরাময় এবং আঘাতপ্রাপ্ত লিগামেন্ট সারানোর ক্ষেত্রেও এটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। Plaster of Paris মাত্র কয়েকমিনিটের মধ্যে জমাট বাধঁতে শুরু করলেও পুরোপুরি শুকিয়ে যেতে ৩৬-৭২ ঘন্টা সময় নিয়ে নেয়। এটির গুণগত মান, জিপসামের অনুপাত, জল ইত্যাদি বিষয়গুলির উপর প্লাস্টারের সফলতা নির্ভরশীল। প্রায় ৪৮ ঘন্টা পর থেকেই পায়ের প্লাস্টার ওজন নিতে পারে। এই পদ্ধতিটি অনেকটাই স্বল্পমূল্যের, প্লাস্টার করা অবস্থাতেও এক্স রে করার সুবিধা রয়েছে এবং কোনোরকম পার্শ্বপ্রতিক্রয়া নেই বললেই চলে।

paris come to treat broken bones

রয়েছে কিছু জটিলতা (Some complications):

ঠিকভাবে প্লাস্টার কাস্ট প্রয়োগ করতে না জানলে পরবর্তীকালে নানান রকমের জটিলতা দেখা দিতে পারে। ঠিক এই কারণেই প্লাস্টার করার আগেই মানবদেহের অ্যানাটমি সমন্ধে স্বচ্ছ ধারণা থাকা অতি প্রয়োজনীয় একটি বিষয়ের মধ্যে পড়ে থাকে। যদিও অনেকক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সমস্ত সতর্কতা অবলম্বন করার পরেও জটিলতার সৃষ্টি হয়। যে জায়গাটিতে প্লাস্টার করা হয় সেই জায়গাটির অভ্যন্তরীণ চাপ বেড়ে যাওয়ার ফলে সেখানকার রক্ত চলাচল কমে যায়, উক্ত অঙ্গটির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়, এমনকি একটা পর্যায়ে গিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
আরও পড়ুন- Blue tea recipe and benefits:অধিক গুণের অধিকারী অপরাজিতা ফুলের নীল চা

এরকম অবস্থাকে ‘কম্পার্টমেন্ট সিনড্রোম ‘ বলা হয়। এই সমস্যাটি ছাড়াও শিরার মধ্যেকার রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি কিংবা ডিপ ভেইন থ্রুম্বোসিস ও হতে পারে। কখনো কখনো নতুন করে প্লাস্টার করার প্রয়োজনও পড়তে পারে যদি আঘাতপ্রাপ্ত জায়গাটি ফুলে ভাঙা জায়গাটিকে পুনরায় স্থানচুত্য করে। এই ধরণের চিকিৎসা গুলো তে আক্রান্ত জায়গাটি নিশ্চল করার জন্য ফাইবারগ্লাস প্লাস্টার কাস্টের মতো আধুনিক প্রক্রিয়াটির ব্যবহার দেখা যায় বর্তমানে। যদিও এই প্রক্রিয়াটি অনুকরণ করার ফলে Plaster of Paris এর আবেদন খুব একটা কমতে দেখা যায়নি।

সম্পর্কিত পোস্টগুলি

আমাদের ফলো করুন

3,919FansLike
42SubscribersSubscribe

না পড়লেই মিস