গুগল বার্ড এআই চ্যাটবট কি আসলেই নিজে নিজে বাংলা শিখেছে

Outlinebangla:গুগল বার্ড এআই নিয়ে কথা বলতে গেলে মনে পড়ে যাচ্ছে জেমস ক্যামেরনের চলচ্চিত্র টার্মিনেটরের স্কাইনেটের কথা। কম বেশি আমাদের সকলেরই জানা আছে। ভবিষ্যতে সেন্টিয়েন্ট হয়ে এই কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক বুদ্ধিমত্তাটি পুরো মানবজাতিকে নষ্ট করতে উঠে পরে লেগেছে।

এই চলচ্চিত্রটির হাত ধরেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সেন্টিয়েন্ট হওয়ার গল্পের শুরু। এই ধারণাটি মাথায় আসার কারণ কল্পবিজ্ঞান থেকে শুরু করে গতানুগতিক বিজ্ঞানপ্রযুক্তি।কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কথা প্রসঙ্গ উঠলেই আগামীদিনগুলিতে AI এর ক্ষতিকর চিন্তা ভাবিয়ে তুলছে বিশেষজ্ঞদের।

কয়েকদিন আগে ভীতি ছড়ানো একটি খবর চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো সেটি হলো নিজে নিজেই নাকি বাংলা শিখে নিয়েছে গুগল বার্ড এআই চ্যাটবট।

গুগল বার্ড এআই-এর ভাষা বিতর্কের সুত্রপাত:

গুগল এর প্যারেন্ট কোম্পানি আলফাবেটর প্রধান নির্বাহী হলেন সুন্দর পিচাই। তিনি মার্কিন চ্যানেল সিবিএসের, সিক্সটি মিনিটস অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে এসে এক পর্যায়ে গিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে নিয়ে সতর্কবানী দিতে শুরু করেন, এখানে তিনি AI এর অভিযোজনের ক্ষমতার কথা তুলে ধরেন। ঠিক এই সময় শোর উপস্থাপককে বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন নিজে নিজের বাংলা শিখতে শুরু করেছে গুগলর AI কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বাংলাতে উত্তর দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়নি এই বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।

এই সাক্ষাৎকারটি হওয়ার পর পরই সকলে ব্যস্ত হয়ে ওঠে গুগল বাডের সঙ্গে স্কাইনেটের মিল খুঁজতে। স্কাইনেট যদি সেন্টিয়েন্ট বা সেলফ আওয়ার হতে পারে তাহলে গুগল বার্ড বা গুগলর অন্যান্য AI এর ক্ষেত্রেও একই জিনিষ ঘটতেই পারে! ইতিমধ্যেই গুগল বার্ড নিজে নিজেই বাংলা জানতে শুরু করেছে। শুরুটা বাংলা দিয়ে করলেও,আর কতদিনই বা লাগবে বিশ্বের অন্যান্য ভাষাগুলো শিখতে?

ভাষা দিয়ে শুরু করেছে যখন তখন বিজ্ঞানের সমস্ত কলা কৌশল,ইন্টারনেটর বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ হতে কতদিনই বা লাগবে। আর এসমস্ত কিছু একবার শিখে গেলে গোটা পৃথিবীকে চালনা করার ক্ষমতা পেয়ে যাবে নখদর্পনে। একবার যদি এই কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা সেন্টিয়েন্টে পরিণত হয় তখন বাড়ির ভিতরকার বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে শুরু করে গোটা বিশ্ব ধ্বংসের ক্ষমতাযুক্ত পারমাণবিক এবং হাইড্রোজেন বোমার মতো অস্ত্র চলে যাবে এর হাতের মুঠোয়।তখন ইচ্ছে করলেই গোটা পৃথিবী ধ্বংস করতে পারবে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

Google Bard AI Chatbot

আসলেই কি তাই হতে চলেছে:

গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সত্যিই কি সেন্টিয়েন্ট হয়ে নিজে নিজে সবকিছু শিখে ফেলছে? উত্তরটি হলো না। আপাতত এসবের কিছুই হচ্ছে না। গুগলে বার্ড নিজে থেকে বাংলা ভাষা শেখেনি। এটির বাংলা শেখার গতিপথটি এক অতিরঞ্জিত কল্পকাহিনি বললেই চলে। অতিরঞ্জিত বিষয়টিকে পাশে সরিয়ে এখন বাডের মতো ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল নির্ভর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভাষা শেখার যাত্রাপথটি নিয়েই আলোচনা করা যাক।

যে কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আমরা যখন কিছু শেখানোর চেষ্টা করি তখন সেটিকে একটি বিশাল ডেটাসেট দিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনিং করার জন্য।যেখানে বইপত্র বা জার্নাল থেকে শুরু করে এখনকার অনলাইন ব্লগ ও আর্টিকেলও থাকে। AI কে প্রথমে এইসমস্ত ডেটা গুলো থেকেই শিখতে বলা হয়। পরে এই ডেটা গুলো ব্যবহার করেই ভাষার গঠন প্রণালী,ব্যবহার ইত্যাদি শেখে। এই ধাপটিকে বলা হয় প্রি ট্রেনিং বা আনসুপারভাইজড লার্নিং।

এরপরের ধাপটি হলো ফাইন টিউনিং অথবা সুপারভাইজড লার্নিং। এই ধাপটিতে AI মডেল গুলিকে ভাষার আরও উচ্চতর প্রয়োগ শেখানো হয় মানব সুপারভাইজারের অধীনে। ট্রেনিং থেকে প্রাপ্ত এই ধরণের ল্যাঙ্গুয়েজ AI মডেল ব্যবহার করেই জন্ম দেওয়া হয় গুগল বার্ড এবং চ্যাট জিপিটির মতো কনভার্সেশনাল

জেনারেটিভ AI টুলস গুলো:

বর্তমানে জিপিটি 4 ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলটির উপর নির্ভর করে কাজ করছে চ্যাট জিপিটি। একইভাবে গুগল বাডের ও একটি ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল রয়েছে যেটির নাম ল্যামডা -ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ফর ডেভেলপড এপ্লিকেশন।

যদি একান্তই গুগল বার্ডকে বাংলা শেখাতে হয়, তাহলে এই ভাবে ধাপে ধাপে প্রি ট্রেনিং এবং ফাইন টিউন করতে হবে। ল্যামডা মডেলটিকে বাংলা শেখাতে গেলে প্রথমেই বাংলা ভাষার ডেটাসেট দিয়ে বাংলার গঠন প্রণালী ও ব্যবহার শেখাতে হবে। যদিও এরমধ্যেই গুগলে নিজেদের ল্যামডা মডেল কে সরিয়ে বার্ড কে পাম বা পাথওয়েজ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলে (PaLM – Pathways Language Model) নিয়ে যেতে শুরু করেছে।

যেখানে লোকানো রয়েছেন গুগল বাডের বাংলা জানার আসল রহস্য। মার্কিন চ্যানেল সিবিএসে হওয়া সাক্ষাৎকারে সুন্দর পিচাইয়ের ওই ধরণের বক্তব্যের পর গুগল সাবেক গবেষক মার্গারেট মিসেল বলেন, গুগলর এই দাবিটি পুরোপুরি ভাবে ভুল। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন পাম মডেলটি খোদ বাংলায় প্রশিক্ষন প্রাপ্ত এক AI মডেল।

আরও তথ্যমূলক লেখাগুলি পড়ুন:
1.Do these before losing your phone: পছন্দের ফোন হারিয়ে যাওয়ার আগেই করুন এই কাজগুলি
2.Artificial Intelligence: ভবিষ্যতে এই সব চাকরির চাহিদা থাকবে তুঙ্গে
3.Aircraft and lightning strikes: বজ্রপাতের সময় আকাশে থাকা বিমানের কি কোনো ক্ষতি হয়?

Google Bard AI

পাম স্কেলিং ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল:

২০২২ সালের শেষের দিকে গুগল পাম স্কেলিং ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলিং উইথ পাথওয়েজ ‘শিরোনামে গবেষণাপত্র প্রকাশ করে। এই রিসার্চ পেপারটিতে পরিষ্কার লেখা রয়েছে আসলেই পাম মডেলকে বাংলায় প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে। পামের ট্রেনিং ডেটাসেটে তাও সাড়ে ১৯ কোটি বা ১৯৪ মিলিয়ন টোকেন উপস্থিত বাংলা ভাষাতে। এখানে টোকেন হলো এক বা একাধিক অক্ষর মিলে তৈরী একটি তথ্য যেটি ডেটাসেটের মৌলিক এক ধরণের একক। বোঝার জন্য সহজ করে বললে শব্দও বলা যেতে পারে।

ক্রমে বার্ডকে ল্যামডা থেকে পাম মডেলে রূপান্তরিত করার ফলে পামের ছায়াতে বার্ড আস্তে আস্তে বাংলা শিখতে শুরু করেছে। যদিও বাংলা ভাষাতে করা সমস্ত প্রশ্নের উত্তর বার্ড এখনো সঠিক ভাবে দিতে পারে না, বাডের উপর করা বেটা টেস্ট এক্সপেরিমেন্টের বেশিরভাগটাই এখনো ল্যামাডের উপর নির্ভরশীল ।

যদিও গুগল খুব শিগগির পুরোপুরি ভাবে ল্যামডা থেকে পাম মডেলে নিয়ে আসবে বার্ডকে। গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার টিম গুলি এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই পাম মডেল নির্ভর বার্ড নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে। আর ঠিক এই কারণেই বাংলা শিখতে ও বুঝতে শুরু করেছে বার্ড। সম্ভবত সুন্দর পিচায় ও তার সহকর্মীগণ এই সমস্ত তথ্যই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন।

সম্পর্কিত পোস্টগুলি

আমাদের ফলো করুন

3,920FansLike
47SubscribersSubscribe

না পড়লেই মিস