আউটলাইন বাংলা ডেস্কঃ ‘রাস উৎসব’ এই নামটির সাথে সকলেই পরিচিত। কথিত আছে রাস কথাটির উৎপত্তি ‘রস’ থেকে। ‘রস’ অর্থে সার, নির্যাস, আনন্দ, হ্লাদ, অমৃত ও ব্রহ্ম বোঝায়। ‘রাস’ কেবল মাত্র বৈষ্ণবদের কাছেই না সকল বাঙালির কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় উৎসব। এই উৎসব কার্তিক পূর্ণিমার রাতে শ্রীকৃষ্ণকে ঘিরেই পালিত হয়। তবে তৈত্তিরীয় উপনিষদে ‘রস’ সম্পর্কে বলা হয়েছে “রসো বৈ সঃ”। বৈষ্ণব দর্শনে এই ‘রস’ বলতে মধুর রসকেই বোঝানো হয়েছে। এই মধুর রসের ঘনীভূত আধার পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ।
তবে বৈষ্ণবদের কাছে রাস কথাটির অন্য অর্থ ব্যবহৃত হয়, শ্রীকৃষ্ণ কার্তিক পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনে যমুনার তীরে গোপিনীদের আহ্বান করেন এবং তাঁদের বিশ্বাস, ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে সঙ্গদান করেন। তাই বলা হয় বৈষ্ণবদের কাছে রাস হল ভক্ত ও ভগবানের মিলন উৎসব। রাস উৎসবে রাস কে ঘিরে নারী-পুরুষের হাত ধরাধরি করে গোল হয়ে নাচতে দেখা যায়, একে বলা হয় ‘হল্লীবক’ নৃত্য। এছাড়াও বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থে রাসের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন পদ্মপুরাণে শারদরাস ও বাসন্তীরাসের উল্লেখ পাওয়া যায়। এবং হ্মবৈবর্তপুরাণে বাসন্তীরাস এবং শ্ৰীমদ্ভাগবত ও বিষ্ণুপুরাণে শারদরাসের বর্ণনা আছে। বিষ্ণুপুরান মতে শ্রীকৃষ্ণ রাস অনুষ্ঠান করেছিলেন গোপরমণীদের সঙ্গে। ওই সময় শ্ৰীধর স্বামী বলেছেন, বহু নৰ্তকীযুক্ত নৃত্য বিশেষের নাম রাস– “রাসো নাম বহু নৰ্ত্তকীযুক্তেনৃত্যবিশেষঃ”।
শ্ৰীমদ্ভাগবতের মতে, পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ যোগমায়াকে নিয়ে রাস উৎসব করেছিলেন
বস্ত্রহরণের দিন গোপিনীদের কাছে শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন, এবং বলেছিলেন পরবর্তী পূর্ণিমা তিথিতে তিনি রাসলীলা করবেন ৷ গোপিনীদের মনোকামনা পূর্ণ করতে রাসলীলা আরম্ভ করেন শ্রীকৃষ্ণ। শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের অধীন, এমনটা ভাবার ফলে গোপিনীদের মন গর্ব-অহংকারে সঞ্চার হয়েছিল। ওই সময় শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের মধ্য থেকে অন্তর্হিত হয়ে যান। পরবর্তী সময়ে গোপিনীরা বুঝতে পারে ভগবান ‘একমাত্র আমার’ ভেবে নিয়ে অহংকারের ফলে শ্রীকৃষ্ণকে তারা হারিয়েছিল, শ্রীকৃষ্ণ এই ত্রিজগতের পতি, তাই শ্রীকৃষ্ণকে কোনো মায়া-বন্ধনে বেঁধে রাখা সম্ভব না। তা বুঝতে পেরে গোপিনীরা একাগ্রচিত্তে শ্রীকৃষ্ণের স্তুতি করতে শুরু করেন। গোপিনীদের ভক্তি দেখে সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মানব জীবনের পরমার্থ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তাঁদের, সাথে সাথে মনের অভিলাষ পূর্ণ করেছিলেন তাঁদের। এই জগতে রাস উৎসবের প্রচলন শ্রীকৃষ্ণের অষ্টসখীর নাম গুলো হচ্ছে ললিতা, বিশাখা, চিত্রা, ইন্দুরেখা, চম্পকলতা, রঙ্গদেবী, তুঙ্গবিদ্যা ও সুদেবী। মনে করা হয় এই ভাবে রাস উৎসবের প্রচলন হয়েছিল।