সারা পৃথিবী জুড়ে ক্ষমতার রাজনীতি। ক্ষমতার হাত বদলে উঠে পড়ে লেগেছে সমস্ত রাজনৈতিক দল। পরাধীন দেশে নেতাদের উদ্দেশ্য বুঝতাম জেল যাওয়া ছিল তাঁদের গর্ব (Mahatma Gandhi)। কিন্তু বর্তমানে নেতাদের উদ্দেশ্য বোঝা বড় দায়। শাসকরূপে যখন দেখি মনে হয় এদের কে বসিয়েছে সিংহাসনে, টেনে নামাও। বিরোধীরূপে যখন দেখি মনে হয় একেই চাই দেশের আগামী ভাগ্যবিধাতা হিসেবে।
— লিখেছেন- সুমন্ত মজুমদার
Outlinebangla: ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে নেতাদের অনৈতিকতা দেখে মনে প্রশ্ন জাগে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কি কোনও মূল্য নেই। সংবিধানের অট্টালিকার সামনে গান্ধীজি (Mahatma Gandhi) কি কেবলই মূর্তি? দেশের নোটে তিনি কি কেবলই ছবি? তাঁর উক্তি কি শুধু রাজনৈতিক জনসভায় মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ভাষণে? কোথায় তাঁর অহিংস নৈতিকতার রাজনীতি? কোথায় তাঁর আদর্শ? তিনি আজ বেঁচে থাকলে বর্তমান পরিস্থিতি দেখার পর খুব কষ্ট পেতেন।
১৮৬৯ সালের ২রা অক্টোবর গুজরাতের পোরবন্দরে হিন্দু ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মেছিলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী (Mahatma Gandhi)। বাবা করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন পোরবন্দরের দেওয়ান। করমচাঁদ গান্ধীর চতুর্থ স্ত্রী পুতলি বাই ছিলেন তাঁর মা। গুজরাতের জৈন প্রভাবিত পরিবেশে গান্ধীজির বেড়ে ওঠা। তাই শৈশবকাল থেকেই অহিংসার শিক্ষা পেয়েছেন গান্ধীজি। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাবা মায়ের পছন্দে কস্তুরবা মাখাঞ্জীর সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। ১৮ বছর বয়সে লন্ডনে ব্যারিস্টারি পড়তে যান। লন্ডন যাওয়ার আগে মায়ের কাছে শপথ নেন যে তিনি মদ, মাংস ও উচ্ছৃঙ্খলতা থকে দূরে থাকবেন। লন্ডনে গিয়ে সেইমতো মেনে চলতেন। পরে পড়াশুনো করে জানার পর সাগ্রহে নিরামিষভোজী জীবনযাপন করতেন। সঙ্গে বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে জেনেছেন।
এরপর ১৮৯৩ সালে আইনের পেশায় দক্ষিণ আফ্রিকায় যান গান্ধীজি (Mahatma Gandhi):
আফ্রিকায় থাকাকালীন তাঁর জীবন বাঁক নিতে শুরু করে। বর্ণ বৈষম্যের শিকার হন তিনি। ডারবানের আদালতে মাথার পাগড়ি খুলতে বলার নির্দেশ থেকে ট্রেনের প্রথম শ্রেণির কামরায় চড়তে না দেওয়া। এইসব অভিজ্ঞতার পর জ্নসাধারণের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে রাজনীতিতে আসেন তিনি। সত্যাগ্রহ আন্দোলনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেন আফ্রিকায় ভারতীয় ও কালো মানুষের অধিকারের স্বার্থে। সফলও হন।
১৯১৫ সালের ৯ জানুয়ারি ভারতে আসেন তিনি। এইদিনটিকে প্রবাসী ভারতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয়। এসে কংগ্রেস নেতা গোপালকৃষ্ণ গোখলের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনিই গান্ধীজির ভারতীয় রাজনীতির গুরু। গান্ধীজির কর্মকাণ্ড ১৯১৮ সালে চম্পারণ বিক্ষোভ ও খেদা সত্যাগ্রহ দিয়ে শুরু। সেই সময় জমিদারদের অত্যাচার ও ফসল না হওয়ায় নগন্য ক্ষতিপূরণে কৃষক পরিবারগুলির প্রাণ যায় অবস্থা। পাশাপাশি গ্রামগুলির নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, মদ্যপান, উচ্ছৃঙ্খলতা ও জাতপাতের নোংরামি দেখে তিনি সেখানে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে এলাকা পরিষ্কার করার পাশাপাশি স্কুল ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু অশান্তি সৃষ্টি করার অভিযোগে গান্ধীজিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হাজার হাজার স্থানীয় মানুষ জেলের বাইরে জড়ো হয়ে গান্ধীজির মুক্তির দাবিসহ একাধিক দাবি নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। আদালত সেইসব দাবি মেনে নেন। সেই থেকে গান্ধীজির জনপ্রিয়তা সারা দেশে ছড়িয়ে যায়। এরপর একইভাবে সত্যাগ্রহের মন্ত্র নিয়ে একাধিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তাঁর নেতাগিরিতে আগ্নেয়াস্ত্র কিংবা গুণ্ডা গ্যাংয়ের প্রয়োজন পড়েনি। সত্য, অহিংসা ও সত্যাগ্রহের উপর সম্বল করে নিজের চরকায় বোনা একটি কাপড়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে গিয়েছেন তিনি। শিখিয়ে গিয়েছেন আত্মনির্ভর হতে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে এবং সত্য ও ন্যায়ের আশ্রয় নিতে।
কিন্তু বর্তমান রাজনীতির যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই হিংসা, ক্ষমতার লোভ, অনৈতিকতা আর মিথ্যাচার। গান্ধীজি যেন আজ কেবল ছবিতে কিংবা মূর্তিতে।
Read More- Remembering Saratchandra: শরৎচন্দ্রকে প্রকাশকের চিঠি, “সই করা চেক পাঠালুম, সংখ্যাটা বসিয়ে নেবেন”