নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রিন্টু পাঁজা, বীরভূমঃ বীরভূম জেলার সব থেকে বড় গ্রাম এই মাড়গ্রাম। প্রায় ৬০ হাজার মানুষের বসবাস। এক দিকে দেশজুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে, যার জেরে মানুষ আজ নাজেহাল। এর মাঝেই বীরভূমের মাড়গ্রামে অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে দিন দশেকের ব্যবধানে তিনজন শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় আতংক ছড়াল মাড়গ্রামে। ঘটনাটি ঘটে ঘটছে মাড়গ্রামে ১নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এঠালো পাড়ায়।
আসল ঘটনা-
চলতি মাসের ইংরেজি ৫/৭/২০ তারিখ আসাদুল শেখ (বয়স ৫ বছর), পিতা আমিরুল শেখ, শিশুটি পেট ব্যথা ও বমি নিয়ে বসোয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হয়, সেখান থেকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় ঠিক তার পরের দিন অর্থাৎ ০৬/০৭/২০ তারিখ মারা যায় বাচ্চাটি।
এরপর ১৫/০৭/২০ তারিখ দুপুরে ওই একই সমস্যা নিয়ে নঈম শেখ (বয়স ৬ বছর), মাতা নুজিবা বিবি। বেলা ১.৩০ এ রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসা চলাকালীন বিকেল ৫ টায় মারা যয়।
এই ঘটনার পর গতকাল অর্থাৎ ইংরেজি ১৮/০৭/২০ ওই একই সমস্যা নিয়ে অহিল সেখ(বয়স ৪ বছর), পিতা অকাল শেখ, দুপুর ১২টা নাগাদ তিনবার বমি করে এবং সঙ্গে সঙ্গে তাকে বসোয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পাঠানো হয় সেখান থেকে ঔষধ দেওয়া হয়। বিকেলে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অবস্থা খারাপ হলে তাকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং আজ অর্থাৎ ১৯/০৭/২০ রাত্রি ১২.৩০ নাগাদ মারা যায় বাচ্চাটি।
এই নিয়ে তিনটি শিশুর মৃত্যু ঘটল অজানা রোগে। বমি ও জ্বরের উপসর্গ থাকার দিন তিনেকের মধ্যেই মৃত্যু হয়েছে শিশুদের এমনটাই বছেন স্থানীয় জনসাধারণ। একই পাড়ার তিনজন শিশুর মৃত্যু ঘটনায় এলাকার কার্যত আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনার ফলে এলাকার শিশুদের অন্যত্র সরিয়ে দিচ্ছেন মায়েরা। এলাকায় তিনটি তরতাজা শিশু মৃত্যুর ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
আরও পড়ুন-বীরভূমকে বীরভূমি করে দিয়েছে’ শহীদ রাজেশ, বাড়িতে এসে বললেন রাজ্যপাল
জনসাধারণ এবং আধিকারিকদের বিবৃতি-
এই অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত এক শিশুর মা নুজিবা বিবি জানান ” আমার ছেলের দুপুর ১২:৩০ এ বমি শুরু হয়, আমাদের মাঠের ধারে বাড়ি, সঙ্গে সঙ্গে আমরা বসোয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে সেখান থেকে স্থানান্তরিত করে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন বিকাল ৫ টা নাগাদ আমার ছেলে মারা যায়। ছেলের নাম নইম সেখ, বয়স ৬ বছর। আজ ৫ দিন হল মারা যাওয়া। কি কারণে মারা গেলো জানা যাচ্ছে না, হাসপাতাল এর লোকেরা কিছু বলতে পারছে না। আজ নিয়ে ৩ টি শিশু মারা গেলো এই পাড়াতে । আমরা এই অজানা রোগের কারণে আতঙ্কিত রয়েছি।”
মাড়গ্রাম ১নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মহবুল আলী (ভুট্টু) জানান “ঘটনাটি হচ্ছে, আমাদের এই এলাকার মধ্যে ছোট বাচ্চা পেটে ব্যথা ও বমি করছে সঙ্গে সঙ্গে তাকে বসোয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে, বসোয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্র সঙ্গে সঙ্গে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে দিচ্ছে , চিকিৎসা চলছে ঠিক এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চাটা মারা যাচ্ছে। আমাদের এখানে এখনও অবধি তিনজন শিশু মারা গেছে ১০ দিনের ভিতরে। শুধুমাত্র একটি ছেলে বর্ধমান থেকে চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। এখনো পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১০ থেকে ১২ জন মত হবে। এটা কি রোগ কিছুই বোঝা যাচ্ছে না বা স্বাস্থ্য দপ্তর তারাও কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। এলাকায় স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা ইতিমধ্যেই চিকিৎসা শুরু করেছে। আমরা চাইছি মানুষ যাতে সুস্থ থাকে আর পুনরায় গ্রামের কোনো বাচ্চা যেনো মারা না যায় সেই মত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
আরও পড়ুন-একবার হাঁচি শুরু হলে থামতেই চায় না? জেনে নিন কি করবেন সেই সময়
শেষ পাওয়া খবর-
বসোয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বি এম ও এইচ ডাক্তার অভিজিৎ চৌধুরী জানান ” আটজন আক্রান্ত হয়েছেন, পেটে ব্যথা ও চার-পাঁচবার বার বমি। তারপরেই আমরা দেখলাম এই দুই তিনদিনের মধ্যেই আটজনের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মূলত যে কারণগুলি মনে করা হচ্ছে যেকোনো ফুড পইজন হতে পারে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা, আর একটা হতে পারে কোন বাসি খাবার মুদিখানার দোকান বা পাড়াতে ঘুগনি ফুচকা খাওয়া। এছাড়াও আরও একটা জিনিস হতে পারে , Typical Presentation of covid 19।”
এলাকায় স্বাস্থ্য দপ্তর ও ব্লক থেকে কড়া নজরদারি ও প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করা হয়েছে। এই দিন স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকরা মৃত অহিল সেখ কে দেখতে যান। এরপর একজন অসুস্থ আসাদুল সেখ এর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখেন বি এম ও এইচ।