Outlinebangla: দোল যাত্রা বাঙালির কাছে বসন্ত উৎসব (Basanta Utsav)। এ দিন ছোট থেকে শুরু করে বড় প্রত্যেকেই রঙের উৎসবে মেতে ওঠে। এ দিন একে অপরকে রাঙিয়ে দেওয়ার দিন। প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের পূ্র্ণিমা তিথিতে দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। দোল পূর্ণিমা, দোল যাত্রা বা বসন্ত উৎসব (Basanta Utsav) যে নামেই ডাকি না কেনো হিন্দুধর্মালম্বীদের কাছে এটি এক আনন্দের উৎসব হিসাবেই পরিচিতি। আমাদের গোটা দেশ জুড়ে মহাধুমধামে দোল যাত্রা পালন করা হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশের কয়েকটি জায়গাতে দোল উৎসব কে হোলি উৎসব বলা হয়ে থাকে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা মনে করেন যে দোল এবং হোলি দুটি একই অনুষ্ঠান। আপনিও যদি এটা ভেবে থাকেন তাহলে আজই এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন কারণ হোলি এবং দোল উৎসব এই দু-য়ের মধ্যে রয়েছে কিছু উল্লেখযোগ্য পার্থক্য। দোল এবং হোলি দুটি আলাদা দিনে পালিত হয় (Basanta Utsav)। দোল বাঙালিদের উৎসব এবং হোলি সাধারণত অবাঙালিরা পালন করে থাকে।
বৈষ্ণবদের দৃষ্টিভঙ্গিঃ
বৈষ্ণবদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ভগবান শ্রী কৃষ্ণ এইদিনে আবির এবং গুলাল একসাথে নিয়ে রাধারনি ও গোপীগণের সাথে রঙ খেলা শুরু করেছিলেন, তাঁরাই ছিলেন এই রঙের উৎসবের মূল স্তম্ভ। এরপর থেকেই এই দিনটি দোলযাত্রা হিসাবে পালন করা হয়। ভগবানের শ্রীকৃষ্ণ ঠিক কবে থেকে লীলা খেলা শুরু করেছিল তা সঠিক বলা যায় না তবে বিভিন্ন আখ্যানে এবং পদে এই সমস্ত কাহিনী বর্ণিত করা রয়েছে। দোল পূর্ণিমার পূর্ণ তিথিতে ১৮৮৬ সালের ১৮ ই ফেব্রুয়ারী মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যদেব জন্মেছিলেন বলে এই তিথির আরেক নাম গৌরপূর্ণিমা।
আরও পড়ুনঃ Colour and human psychology: রঙই বলে দেবে আপনার মনের অবস্থা! জানেন কিভাবে
আমরা কম বেশি সবাই প্রায় বিষ্ণু ভক্ত প্রহ্লাদের কথা শুনেছি, পিতা হিরন্যকশিপু দৈত্যদের রাজা ছিলেন। তিনি পুত্রের ভগবান বিষ্ণুর প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা কিছুতেই মেনে নিতে পারতেন না তাই সবসময় নিজ পুত্রকে হত্যা করার পর একটা ফন্দি আটতেন। কিন্তু প্রত্যেকবারই কোনো না কোনোভাবে ব্যর্থ হতেন তাই এবার তিনি বোন হোলিকাকে বলেন প্রহ্লাদকে সঙ্গে করে অগ্নিকুন্ডে প্রবেশ করতে কারণ হোলিকা ছিল দৈব বর প্রাপ্ত, অগ্নি কোনোভাবেই তাঁকে স্পর্শ করতে পারবেন না। কিন্তু ঘটলো উল্টোটা, হোলিকা যখন অগ্নিকুন্ডে প্রবেশ করলো তৎক্ষণাৎ পুঁড়ে ছাই হয়ে গেল অপরদিকে প্রহ্লাদ সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থাই অগ্নিকুন্ডের ভিতর থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো। হোলিকাকে নিয়ে এই ঘটনাটি স্বরণীয় করতে গিয়ে আজকে আমাদের সবার পছন্দের হোলি উৎসবের সূচনা হয়। কারোর মতে আবার,পুতনা রাক্ষসীবধ কে উদযাপন করতে হোলির প্রচলন শুরু হয়েছিল। আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর আগে ইন্দ্রদ্যুম্ন নামক এক রাজার অস্তিত্ব ছিল হিন্দু পুরান অনুযায়ী এই রাজার সময়কালে গোকুলে হোলি উৎসব পালন করা হতো বলে জানা যায়। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় একাধিকবার ইন্দ্রদ্যুম্ন নামটি উঠে আসায় আদৌ ইন্দ্রদ্যুম্ন কে ছিল তা নিয়ে মতবিরোধ লক্ষ্য করা যায়।
আরও পড়ুনঃ Flower Colour: জানেন কি রাতে ফোটা ফুল সাদা হয় কেনো?হোলি উৎসবের সূচনা
আরও পড়ুনঃ Most Beautiful Birds: রূপে গুনে সমৃদ্ধ বিশ্বের সেরা পাঁচ পাখির কথা…
জৈমনির ‘পূর্ব মীমাংসা সূত্র ‘তে দোল উৎসবের কথা বর্ণনা করে হয়েছে। খ্রীষ্টিয় সপ্তম শতাব্দী নাগাদ সম্রাট হর্ষবর্ধণের লেখা রত্নাবলি নাটকে হোলির খেলার উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও মালতি মালব নাটকেও বসন্ত উৎসব পালনের কথা উঠে এসেছে। মহাকবির’ ঋতুসংহার’ কাব্যের কথা কম বেশি আমরা সবাই শুনেছি। এই কাব্যের বসন্ত বর্ণনায় কুমকুম মিশ্রিত রঙ, কুসুম রস এবং কৃষ্ণচন্দনের সাহায্যে রমণী এবং যুবতীরা নিজেরদেরকে রাঙিয়ে তোলার কথা উঠে এসেছে।
আমরা ভগবান কৃষ্ণের জীবনকাহিনী পড়তে গিয়ে দেখেছি তাঁর পুরো ছেলেবেলা কেটেছে বৃন্দাবন-মথুরাতে। সেখানে হোলি চলে ১৬ দিন ধরে। এই উৎসব কে প্রাচীন ভারতে নাকি হোলিকা নামেও ডাকা হতো। ভবিষ্যত বেদ এবং পুরানে এই উৎসবের উল্লেখ রয়েছে। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগো, গায়ানা ইত্যাদি জায়গায় মহাপ্রভু দোলের প্রচলন করে গেছেন। গায়ানায় আবার হোলিকে ফাগুয়া নামে ডাকা হয়ে থাকে।
এখন আমরা বাংলার মানুষজন যে দোল উৎসব পালন করে থাকি, এটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২০ সালে শান্তিনিকেতনে প্রথম শুরু করেছিলেন। তারপর থেকেই প্রত্যেক বছর ধুমধাম করে শান্তিনিকেতনে দোলউৎসব পালন করা হয় কিন্তু ২০২০সাল থেকে দোলের আগেই বসন্ত উৎসব (Basanta Utsav) করা শুরু করেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।