Body clock: দেহ ঘড়ির এক অজানা কাহিনী

Outlinebangla desk: ঘড়ি বলতে যেটা আমরা বুঝি বা যেসব ঘড়ির চিত্র প্রথমেই আমাদের মাথায় আসে সেগুলি হল হাতঘড়ি, টেবিল ঘড়ি বা দেয়ালঘড়ির ছবি। কিন্তু এছাড়াও আর এক ঘড়ি আছে যেটা আমাদের চোখের আড়ালে থাকে, সেটা হলো দেহঘড়ি (Body clock)। আমরা যেভাবে যান্ত্রিক ঘড়ির সাহায্যে বাইরের জগতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলি, ঠিক একইভাবে দেহঘড়ি (Body clock) আমাদের শরীরের বাইরে জগতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। এটিকে আর একদিকে জৈবিক চক্রও বলা যেতে পারে।

দেহ ঘড়ি VS যান্ত্রিক ঘড়ি:

আমরা যান্ত্রিক ঘড়ির সাহায্যে আমাদের একটা নির্দিষ্ট নিদ্রার সময় নির্ণয় করে নিয়েছে। কিন্তু বহুবার দেখা যায় যে যান্ত্রিক ঘড়ি না দেখেও যে সময়টা নিদ্রার জন্য আমরা নির্ণয় করেছি, ঠিক সেই সময় আমাদের কিন্তু ঘুম পায়। আবার বাইরে সূর্যের তীব্র আলো। দেহ বুঝতে পারে যে এবার সারাদিনের কাজে যুক্ত হতে হবে আর ঘুমানোর সময় নেই। ঘুম, খাওয়া, হাঁটা, জল পান করা এগুলো একটা জৈবিক ঘটনা। আর আমাদের এই জৈবিক ঘটনাগুলো দেহ ঘড়ির কাঁটা মেনে চলে। আবার শরীরে যে বিপাকক্রিয়া ঘটে, সেটাও সময় অনুসরণ করে। কিন্তু যান্ত্রিক ঘড়ি তো ব্যাটারির সাহায্যে চলে তাহলে আমাদের শরীরের এই দেহ ঘড়িটা কিসের সাহায্যে চলে? এই দেহ ঘড়ি চলে একটি হরমোনের প্রক্রিয়ার সাহায্যে। যেটাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় মেলাটোনিন বলে, এই মিলোটোনিন আমাদের জৈবিক চক্রের সঙ্গে যুক্ত।

আলো এবং অন্ধকার সম্পর্কে জানাঃ

মস্তিষ্কের কেন্দ্রে অবস্থিত পাইনাল গ্রন্থি থেকে মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণ করে। আলোকরশ্মি বা অন্ধকারের ওপরও এই মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ নির্ভর করে। কারণ মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ অন্ধকারে বেড়ে যায় আর আলোকরশ্মিতে কমে যায়। তাহলে আবার একটা প্রশ্ন আমাদের মনে আসতে পারে যে এই আলো অন্ধকারের ব্যাপারটা আমাদের পাইনাল গ্রন্থি কিভাবে বুঝতে পারে? উত্তরটা হল যেখান থেকে আমাদের দৃষ্টিশক্তি মস্তিষ্কে যায়, পাইনাল গ্রন্থি প্রাথমিকভাবে আলো এবং অন্ধকার সম্পর্কে জানতে পারে। আর এই কাজে আমাদের শরীরের যে অঙ্গটা এই অনুভূতি বা ছবি তুলে ধরে, সেটা হল চোখ। এই চক্ষুগোলকের একেবারে ভেতরের আবরণকে বলা হয় রেটিনা।

পাইনাল গ্রন্থিটে তখন মস্তিষ্কে মেলোটনিন হরমোনের নিঃসরণ ১০ গুণ বেড়ে যায়, ফলে এই হরমোনটি আমাদেরকে ঘুমোতে সাহায্য করে। রেটিনায় আলোক রিসেপ্টরগুলি নির্দিষ্ট স্নায়ু প্রান্তের মাধ্যমে আলো গ্রহণ করে এবং দেখার অনুভূতি তৈরি করতে আমাদের মস্তিষ্কের পিছনের ভিজ্যুয়াল সেন্টারে পাঠায়। এই রেটিনায় এমন নিউরন রয়েছে যা দেখার অনুভূতি জাগিয়ে না দিয়ে সরাসরি হাইপোথ্যালামাসের সুপারাকিয়াসমেটিক নিউক্লিয়াসে যায়। সুপারাকিয়াসমেটিক নিউক্লিয়াস হল জৈবিক চক্রের আদর্শ স্থান। এটি মূলত পুরো শরীরের সার্কাডিয়ান ছন্দের কেন্দ্র।

Body clock কিভাবে স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করেঃ

চোখ যখন অন্ধকারের বা আলোর ছবিটা তুলে ধরে সুপ্রাকায়াজমেটিক নিউক্লিয়াস থেকে আলো-আঁধারের সংকেত বা সংবাদ চলে যায় পিনিয়াল গ্রন্থিতে। তারপর যখন পিনিয়াল গ্রন্থে আলো বা অন্ধকারের সংকেত বা সংবাদটা পায় তখন এই মেলাটোনিনের নিঃসরণের পরিমাণ কম বেশি হয়। অন্ধকার হলে মেলাটোনিনের নিঃসরণ ১০ গুণ বেড়ে যায়, যার ফলে আমরা ঘুমাতে পারি আর আলোতে মেলাটোনিনের নিঃসরণ কমে যায়। ফলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। আমাদের মধ্যে অনেকই মানুষ আছে যারা হালকা আলোতেও ঘুমাতে পারে না তার কারণ হলো এই মেলাটোনিনের নিঃসরণ।

চেরনোবিলে ১৯৮৬ সালের পারমাণবিক দুর্ঘটনাঃ

মেরু অঞ্চল মানে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে মাসের পর মাস দিন বা রাত থাকে, পরিবেশের সাপেক্ষে দেহ ঘড়ি কাজ এইসব অঞ্চলে কঠিন হয় পড়ে। তাই এই জায়গাগুলির জন্য ঘরে গাঢ় রঙের পর্দা দিয়ে ঘুমাতে হয়। আবার উন্নয়নশীল বিশ্বে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে দিনরাত পরিশ্রমের ব্যবস্থা করা হয়। এতে শ্রমিকরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন, কাজে মনোযোগ হারান। বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞ ইউক্রেনের চেরনোবিলে ১৯৮৬ সালের পারমাণবিক দুর্ঘটনাকে শ্রমিকদের শরীরের ঘড়ির অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী করেছেন। এই দুর্ঘটনাটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনা বলে মনে করা হয়।

যেসব শ্রমিককে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে বিভিন্ন সময় কাজ করতে হয় তারাও অন্যদের তুলনায় বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। সেক্ষেত্রে অনিদ্রা, আলসার, বিষণ্ণতা, খিটখিটে মেজাজ, হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের মতো অনেক রোগ দেখা দেয়। সার্কাডিয়ান ছন্দের একটি চক্র সাধারণত ২৫ ঘন্টার মধ্যে সম্পন্ন হয়, আমরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে দিন গণনা করি যার মানে সাধারণত এটি একটি দিনের বেশি সময় নেয়। এই সময়ের মধ্যে, মেলাটোনিনের নিঃসরণও আলো এবং অন্ধকারের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পায় এবং হ্রাস পায়। মেলাটোনিনের এই চক্রাকার পরিবর্তনগুলি দেহঘড়িকে প্রভাবিত করে।

আরও পড়ুনঃ Salt is Essential to Life: লবন ছাড়া কি বাঁচা সম্ভব?
আরও পড়ুনঃ Eye diseases: কেন চোখ ঘষা উচিত নয়

সম্পর্কিত পোস্টগুলি

আমাদের ফলো করুন

3,920FansLike
47SubscribersSubscribe

না পড়লেই মিস