Outlinebangla: আমাদের পৃথিবীর চারিদিক সুন্দর বহু প্রাণীতে পরিপূর্ণ। তবে কোনো কিছুর যেমন ভালোদিকে থাকে সেরকম খারাপ দিকও থাকে। একইভাবে পৃথিবীতে সুন্দর প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে তেমন কুৎসিত প্রাণীরও অস্তিত্ব আছে। এরকমই একটি প্রাণী হলো Blobfish যার বৈজ্ঞানিক নাম Psychrolutes marcidus। এটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে কদাকার প্রাণীর তকমা দেওয়া হয়। সমুদ্রের গভীর জলে বসবাসকারী এই মাছটিকেই কোন কারণে বা কিসের উপর ভিত্তি করে বিশ্বে সবচেয়ে কদাকার আখ্য দেওয়া হলো সেটিই আজ আমরা আপনাদের জানাবো।
Blobfish-কে কুৎসিত প্রাণীর তকমা দেওয়ার কারনঃ
‘Ugly Animal Preservation Society’ অনলাইন একটি প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করেছিল ২০১৩ সাল নাগাদ। প্রতিযোগিতাটির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে কুৎসিত প্রাণীর অনুসন্ধান করা। যেখানে ভোটে দেওয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ কদাকার প্রাণীটিকে বেছে নেন। এখানে ভোট দিয়েছিলো প্রায় ৩ হাজার মানুষ সেখানে 795 ভোটে বিজয়ী হয় এই মাছটি। এরপর থেকেই বিশ্বের সেরা কুৎসিত প্রাণীটির আসন ছিনিয়ে নেয় এই মাছটি।
আরও পড়ুনঃ Fish Pedicure Spa: যখন মাছের আদরে হাসবেন আপনিও
তবে আপনাদের মধ্যে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে হঠাৎ কুৎসিত প্রাণী বেছে নেওয়া হলো কেনো? বিষয়টিকে ভালো করে খতিয়ে দেখলে দেখা যায় প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য ছিল মহৎ। আমাদের বিশ্বে প্রতিনিয়ত ২০০ থেকে ৩০০ ধরণের উদ্ভিদ বা প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এই বিপন্ন প্রাণীগুলিকে রক্ষা করার উদেশ্য এই পদক্ষেপটি নেওয়া হয়েছিল। মানুষের সুন্দর যে কোনো কিছুর প্রতি আগ্রহের শেষ নেই তাই বাঘ এবং হরিনের মতো সুন্দর প্রাণীগুলিকে নিয়ে মানুষ সবসময় সচেতন অন্যদিকে ব্লবফিশের মতো কুৎসিত প্রাণীর কোনো দামই নেই যার ফলে কোনো সচেতনতাও নেই। আমাদের মধ্যে বহুজন আছেন যারা হয়তো এদের সম্পর্কে কোনোকিছু জানেনই না। ‘Ugly Animal Preservation Society’ মানুষের মধ্যে সমস্ত ধরণের প্রাণীদের প্রতি সচেতনতা জাগানোর উদ্দেশ্যে একটি মাসকট বাছাইয়ের পরিকল্পনা করেছিলেন। এখান থেকেই অনলাইন ভোটের বিষয়টি উঠে এসেছিলো।
Strange creatures of the ocean deep
গুগলে Blobfish নামটি সার্চ করলে সবার আগে যে ছবিটি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেটা সাধারণত মিঃ ব্লবি নাম পরিচিত। মিঃ ব্লবির এই ছবিটিই অনলাইনের ভোটাভটি তে পৃথিবীর সবথেকে কদাকার প্রানী হিসাবে বিজয়ী স্থান লাভ করে। এই প্রাণীগুলির প্রকৃত আবাসস্থল অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড বা তাসমানিয়ার সমুদ্রে প্রায় ৬০০-১২০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত নামতে হবে। সামনা সামনি হঠাৎ মাছটিকে দেখে আপনি অবাক হতে বাধ্য কারণ সমুদ্রের গভীরে এই মাছটিই দেখতে দারুন সুন্দর। এরা স্ব-ইচ্ছায় কখনোই নিজেদের টোয়াইলাইট জোন বা সমুদ্রের সূর্যের আলোবিহীন অঞ্চলের উপর আসবেই না কিন্তু যদি জেলে বা বিজ্ঞানীদের খপ্পরে পড়ে তখন আলাদা কথা।
আরও পড়ুনঃ Story of innocent animals used in research: গবেষণার কাজে ব্যবহৃত নিরীহ প্রাণী গুলির কথা
সমুদ্রের তলাতে জলের অধিক চাপ থাকে, যে চাপে আপনারা শরীরও পেস্টের মতো হয়ে যাবে যদি আপনি সুট ছাড়া যান। ব্লবফিশের দেহ সেভাবেই অভিযোজিত হয়েছে, যাতে তারা অত্যাধিক জলের চাপেও টিকে থাকতে পারে। এই জন্যই এদের মাংসগুলি জেলির মতো এবং হাড়গুলো খুব নরম প্রকৃতির হয়ে থাকে। জলের প্রচন্ড চাপ থাকলেও তাদের অঙ্গপ্রত্যঙের কিছুই হয় না কারণ তাদের হাড়ই তো নেই। এর সঙ্গে সঙ্গেই সাঁতার কাটার জন্য তাদের কোনো গ্যাস ভর্তি গহ্বর অর্থাৎ ব্লাডার ও নেই । প্রায় সব মাছেরাই প্লবতা বজায় রাখার জন্য এটি ব্যবহার করলেও ব্লবফিশ জলের প্রচন্ড চাপের জন্য এই গহ্বর ধ্বংস হয়ে যায়। এই বৈশিষ্টটি অন্যমাছেদের থেকে ব্লবফিশকে আলাদা করে তোলে।
ব্লবফিশদের সমুদ্রের বাইরে কমচাপ যুক্ত স্থল ভাগে তুলে আনলে এরা বিচ্ছিরি রকম ভাবে ফুলে ফেপে কুৎসিত রূপ ধারণ করে যার মূল কারণ হলো তাদের বিশেষ রকমের শারীরিক গঠন। তবে নিজেদের আবাসভূমি জলের গভীরে অন্যান্য সকল প্রাণীদের মতোই এরাও বহু ক্ষেত্রেই সুন্দর তা বলা যেতেই পারে ।